ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ বাংলাদেশি নিহত, বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
পরিবারের হাল ধরতে মাত্র দেড় বছর আগে মধ্যে প্রাচ্যের দেশ ওমানে পাড়ি জমিয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী তরুণ মো. রবিন। মৃত্যুর খবর আসার তিনদিন আগে বাড়িতে টাকাও পাঠিয়েছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এই মৃত্যু কোনওভাবে মেনে নিতে পারছে না তারা। পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে ভাসছেন স্বজনরা। শুধু রবিন নয়, শনিবার ওমানের দুখোম শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছয়জনের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। কেউ হারিয়েছেন সন্তান। কেউ হারিয়েছেন স্বামী। কেউ আবার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রয়ারি) হারামিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাসন আলী হাজীর বাড়িতে গেলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। এই বাড়ির বড় ছেলে রবিন প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার বাবা জহিরুল ইসলাম জসিম জানান, ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। মাত্র দেড় বছর আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলে। মৃত্যুর তিনদিন আগেও ব্যাংক ঋণ শোধ ও পরিবারের খরচের জন্য ১৬ হাজার ৫০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন রবিন। ভেবেছিলেন সন্তানের আয়ে দুঃখ ঘুছবে পরিবারের। ছেলে ফিরে আসলে বিয়ে করানোর পরিকল্পনাও ছিল বাবার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সংসারে সুখ ফেরার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রবিন। সন্তানকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা হোসনা আরা বেগম।
একই দৃশ্যে দেখা গেছে সন্দ্বীপ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এনাম নাহার মোড়স্থ পাঠান মাঝির বাড়ির মো. মিনহাজের বাড়িতেও। ২২ বছর বয়সী মিনহাজের তিনভাই, দুই বোন। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার মা। বাবা প্রবাসী বেলাল উদ্দিনও আবুধাবিতে দিশেহারা হয়ে আছেন। সন্তানকে শেষ দেখা দেখতে না পারার আক্ষেপ করছেন বলে জানান স্বজনরা। মিনহাজের চাচা মো. মনির জানান, তার ভাই বেলাল উদ্দিন আবুধাবিতে প্রবাসী হলেও তার উপার্জন খুব ভালো নয়। তাই ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলেন। ছেলে ভালো উপার্জন করতে পারলে তার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
নিহতদের মধ্যে অন্য তিনজনের বাড়ি সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নে। তাদের ঘরে ঘরেও চলছে শোকের মাতম। স্বজনরা নিহত প্রিয়জনদের শেষ দেখা দেখতে অপেক্ষা করছেন। এ বিষয়ে সারিকাইত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম পনির জানান, ওমান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের মধ্যে মামুন, মিলাদ ও ফারুকের বাড়ি সারিকাইত ইউনিয়নে। গুরুতর আহত তিনজনের মধ্যে দু’জনের বাড়িও সারিকাইত ইউনিয়নে। তারা হলেন-আশ্রাফ ও দিদার। সন্দ্বীপের সদ্য সাবেক পৌর মেয়র জাফর উল্যা টিটু বলেন, নিহত মিনহাজের পরিবার আমার প্রতিবেশী। মিনহাজ আমাকে মামা বলে ডাকতেন। খুবই হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত যুবক ছিল। অল্প বয়সী এসব ছেলেদের মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। সরকার যেন তাদের লাশ পরিবারের কাছে আনতে সহায়তা করেন।
বাজেট অধিবেশন বসছে ৫ জুন
একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন আগামী ৫ জুন শুরু হবে। ওই দিন বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরু হব…