ভুলে যাওয়া যখন রোগ
বাংলার ডাক ডেস্কঃ বাংলাদেশসহ বিশ্ব জুড়েই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ভয়াবহতা দিনে দিনে বাড়ছে। ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ যার ফলে কিছু মনে রাখতে পারেন না রোগী। এমনকি এ রোগটির কারণে একটু আগেই করা কাজ ভুলে যায় অনেকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে এমনটা কিন্তু নয়। এটি বিভিন্ন রোগের কারণে হয়ে থাকে।
ডিমেনশিয়া কী?
আমাদের মস্তিষ্ক আমরা যা চিন্তা, অনুভব, বলি ও করি তার প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি আমাদের স্মৃতিগুলোও সংরক্ষণ করে থাকে। কিছু কিছু রোগ আছে যা আমাদের মস্তিষ্ককে ঠিকমত কাজ করা থেকে বিরত রাখে। যখন কারো এরকম রোগ হয়ে থাকে, তাদের কোনো কিছু মনে রাখা, চিন্তা করা ও সঠিক কথা বলা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। তারা এমন কিছু বলতে বা করতে পারে যা অন্যদের কাছে অদ্ভূত মনে হতে পারে, এবং তাদের জন্য দৈনন্দিন কাজ করা কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। পূর্বে তারা যেমন ছিল তেমন তারা নাও থাকতে পারে।
এসব বিভিন্ন সমস্যা বর্ণনা করতে চিকিৎসকেরা ডিমেনশিয়া শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। ডিমেনশিয়া আছে এমন অধিকাংশেরই আলঝেইমারস ডিজিজ বা ভ্যাসকিউলারডিমেনশিয়া থাকে, তবে এর অন্যান্য ধরনও রয়েছে।
যে কারণে এই রোগ হয়?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবার ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে এমনটা কিন্তু নয়। এটি বিভিন্ন রোগের কারণে হয়ে থাকে। এসব রোগ মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে থাকে, তাই এগুলো রোগীদেরকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।
এখন পর্যন্ত এটা জানা যায়নি যে কেন এসব রোগ একজনের হতে পারে কিন্তু অপরজনের না। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা ডিমেনশিয়া সম্পর্কে আরো জানার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কাউকে ডিমেনশিয়া কীভাবে প্রভাবিত করে থাকে?
আমরা সবাই মাঝে মাঝে বিভিন্ন জিনিস ভুলে যাই, যেমন কোথায় আমাদের চাবি রেখে এসেছি। এটার মানে এই নয় যে আমাদের সবার ডিমেনশিয়া আছে। মেনশিয়ার লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে যার ফলে দৈনন্দিন জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। যখন কারো ডিমেনশিয়া শুরু হয়, তখন নিম্নোক্ত জিনিসগুলো প্রকাশ পেতে থাকে-
- সাম্প্রতিক ঘটনা, নাম ও চেহারা ভুলে যাওয়া।
- প্রায়শই অল্প সময়ের মধ্যে একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করা।
- জিনিসপত্র ভুল স্থানে রাখা।
- মনোযোগ ধরে রাখা বা সরল সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে উঠা।
- দিনের তারিখ বা সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া।
- হারিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে নতুন নতুন স্থানে।
- সঠিক শব্দ ব্যবহার বা অন্যদের কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া।
- অনুভূতিতে পরিবর্তন, যেমন সহজে বিমর্ষ ও মর্মাহত হয়ে পড়া, বা কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
ডিমেনশিয়া খারাপের দিকে যেতে থাকলে রোগীর জন্য স্পষ্ট করে কথা বলা ও তার প্রয়োজন বা অনুভূতি সম্পর্কে কাউকে জানানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাদের জন্য নিজে থেকে খাওয়া ও পান করা, কোনো কিছু ধোয়া ও পোশাক পরা এবং অন্যদের সাহায্য ছাড়া শৌচাগারে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
কাদেরকে ডিমেনশিয়া প্রভাবিত করে থাকে?
ডিমেনশিয়া খুবই সাধারণ। ইউকেতে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ জনের ডিমেনশিয়া দেখা দেয়। ইউকেতে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার হার বেশি। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেশি, তবে এটি তরুণদেরও প্রভাবিত করতে পারে।
অন্যদের তুলনায় কিছু মানুষের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেমন যাদের স্ট্রোক হয়েছে বা যাদের রয়েছে অথবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, বিষণ্ণতা।
এর কোনো নিরাময় আছে কী?
এখন পর্যন্ত ডিমেনশিয়ার কোনো নিরাময় পাওয়া যায়নি। যদি কারো ডিমেনশিয়া হয়, তাহলে সেটি তার জীবনের বাকি সময় পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। অল্প সময়ের জন্য কিছু ওষুধ রোগীর দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। কিছু গ্রুপ অ্যাক্টিভিটিও রয়েছে যেগুলোতে রোগীরা অংশ নিতে পারে যা তাদের লক্ষণগুলো নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এই ব্যাপারে চিকিৎসক আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারবে।
দুর্ভাগ্য হল যে এসব রোগ ঠেকানোর জন্য কোন ওষুধ নেই আর তাই সময়ের সাথে সাথে রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
যেভাবে ডিমেনশিয়া রোধ করা যায়?
আপনার ডিমেনশিয়া হওয়া রোধ করার কোনো নিশ্চিত উপায় নেই, তবে কিছু জিনিস আছে যা করলে আপনার তা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। যেমন ধরুন-
চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। সেই সঙ্গে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রাও নির্ণয় করে নিন এবং তা উচ্চমাত্রার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
- যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
- ধূমপান পরিহার করুন।
- সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন যাতে থাকবে প্রচুর ফলমূল ও শাক-সবজি।
- আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- কাজে সক্রিয় থাকুন এবং লম্বা সময় ধরে বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার মস্তিষ্ককে কাজে লাগান– আপনার পছন্দের কোনো অ্যাক্টিভিটি বা সামাজিক গ্রুপের মাধ্যমে।
- প্রতি সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।
ইরানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে
পরমাণু ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে ইরানের। অন্যদিকে ইউক…