লবিস্ট নিয়োগকারীদের বিচার হওয়া উচিত
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষাৎকারে
দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের লবিস্ট নিয়োগ অবশ্যই রাষ্ট্রবিরোধী বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক।
আর এ কাজে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাঠানো হয়ে থাকলে, মানি লন্ডারিং আইনে তাদের বিচার হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
সাক্ষাৎকারে তিনি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন, ওই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ বা বর্জন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান বিষয়ে কথা বলেছেন।
আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাতে কোনো সমালোচনা না হয়, সে জন্য আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বাধিক সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ‘বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ’ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা বৈধ। লবিস্ট ফার্মগুলোতে আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাবেক রাজনীতিবিদ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। নিয়োগকারীদের কথা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বোঝানোই এই ফার্মগুলোর কাজ। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যেও লবিস্ট নিয়োগ করা যায়। যেমন কাশ্মিরসহ বেশকিছু ইস্যুতে ভারতের লবিস্ট নিয়োগ করা আছে। পাকিস্তানেরও লবিস্ট আছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল দেশের বিরুদ্ধে, দেশকে হেয় করার জন্য, দেশের বিরুদ্ধে স্যাংকশন দেওয়ার জন্য লবিস্ট নিয়োগ দেয়, এটা তো খুব দুঃখজনক। তারা (বিএনপি) এটা করতে পারে না এবং আমি মনে করি যে তারা এক ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছে, অবশ্যই রাষ্ট্রবিরোধী। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই টাকা তারা কোথা থেকে পেলো? টাকা যদি অবৈধ উপায়ে পাঠিয়ে থাকে, তাহলে মানি লন্ডারিং আইনে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের মধ্যে সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের তৃণমূলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো নির্বাচনে সন্ত্রাস, রক্তক্ষয় বা সহিংসতা মোটেও কাম্য না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোরভাবে এগুলো মোকাবিলা করা উচিত। নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিক নির্দেশ দেওয়া এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা। সহিংসতা হলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, দেশের মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রতি আস্থা হারায় এবং নির্বাচন ও গণতন্ত্র বিঘ্নিত হয়।
ইউপির সহিসংতায় তৃণমূল পর্যায়ে প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, এতে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছেই। পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা দাঁড়ায়, দলের এক জনের সঙ্গে আরেক জনের চিরশত্রুতা হচ্ছে, ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে এটা প্রভাবিত না হয় তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব দলকে সুশৃঙ্খল করার জন্য, দলের কমান্ড মেনে চলার জন্য। দল থেকে যাকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে তার পক্ষে কাজ না করে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন এবং দলীয় কর্মীদের বিভ্রান্ত করেছেন তারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অবশ্যই তাদের সাংগঠনিকভাবে বিচার হওয়া উচিত।
বিএনপির নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিএনপির দাবিগুলো মানা না হলে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে অবশ্যই নির্বাচনে আসবে। আমি মনে করি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ করার জন্য তারা কাজ করবে। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং এ বিষয়ে তাদেরও সযোগিতা চাই।
আগামী নির্বাচনের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জের বিষয় আছে কি না জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) ২০১৪ সালে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এর পরে ২০১৫ সালে তিন মাসব্যাপী একটানা হরতাল, অবরোধ করেছিল। চ্যালেঞ্জ যেটা সেটা হলো যে কোনো মূল্যে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, আমরা দলীয়ভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আমরা চাই সকলের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নির্বাচন নিয়ে যেনো কোনো সমালোচনা না হয়, কোনো প্রশ্ন যেনো না থাকে। তারপরও এদেশে একটা সংস্কৃতি আছে নির্বাচনে যারা হেরে যায়, তারা হেরে গেলেই বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই। সেটা যত কমিয়ে আনা যায় তার জন্য চেষ্টা করবো। আমরা চেষ্টা করবো তাদেরকে নির্বাচনে আনার জন্য। তবে তারা যদি না আসে নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথা নিয়মেই হবে।
বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক আসুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এখন আমরা আইন আপডেটেড করেছি। সম্প্রতি আইন হয়েছে, এই আইনের আলোকে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। আমাদের আরপিও আছে, এটা যথেষ্ট উপযোগী। এর মাধ্যমে আমরা সুন্দর নির্বাচন করতে পারবো।
তিনি বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতা অনুযায়ী সরকার এবং সরকারি কর্মকর্তা সবার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা, আইনগতভাবে তারা করতে বাধ্য। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ওপর তাদের (ইসি) নিয়ন্ত্রণ থাকে।
মসজিদে মানতে হবে ৯ নির্দেশনা
দেশজুড়ে বৈশ্বিক মহামারিকরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ ছয়…