আর কত পণ্যমূল্য বাড়বে?

Total Views : 96
Zoom In Zoom Out Read Later Print

খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবামূল্য অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি তেমন দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোথাও পণ্যমূল্যের সমন্বয় নেই। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের জীবনযাপনের টানাপড়েন চরমে পৌঁছেছে। তাদের আয় বাড়েনি, ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। তারা যে ব্যয়ের খাত বাড়িয়েছে, তা নয়, স্বাভাবিক অবস্থায় যে ব্যয়ে জীবনযাপন করত, সেই ব্যয় দিয়ে পণ্য কিনতে পারছে না। খাদ্য, চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়ার অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় ছাড়া অন্যান্য যে ব্যয় তা অনেকে বাদ দিয়েছে। ভ্রমণ, বিনোদন, বিয়ে-সাদীর দাওয়াত ইত্যাদি বর্জনের পাশাপাশি মোবাইল ডাটাসহ কম প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়েও জীবনযাপনের টানাপড়েনে কমাতে পারছে না। বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ ভোগের চাহিদা কমাতে বাধ্য হওয়ায়, পুষ্টিহীনতাসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য ২-৩ টেবিল চামচ তেল, ২৭০ ৪৫০ গ্রাম চাল, আটা, ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম মিশ্র শাক-সবজি, ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ, গোশত, ডিম খেতে হয়। বাংলাদেশে নি¤œ আয়ের মানুষ এ খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। বিবিএস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষ এখন দুই ধরনের পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে। প্রথমত অভাবজনিত পুষ্টিহীনতা, দ্বিতীয়ত, খাদ্য সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগজনিত পুষ্টিহীনতা। এর ফলে জন্ম নিচ্ছে খর্বাকৃতির ও কমবুদ্ধিসম্পন্ন শিশু। দুর্বল হয়ে পড়ছে কর্মক্ষম মানুষ।

বিগত তিন বছর ধরে সাধারণ মানুষ নানা অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করছে। এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তারা খাদ্যাভাবে পড়েছে। স্বচ্ছন্দ জীবন থেকে কষ্টকর জীবনে নেমে গেছে। অনেক পরিবার আগে যেখানে সপ্তাহে এক-দুই দিন মাছ-গোশত খেত, এখন তারা তা বাদ দিয়েছে। খরচ কমিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সর্বত্র পড়ছে। ভোগ কমে গেলে উৎপাদনও কমে যায়। সাধারণত চাহিদার সাথে উৎপাদনের সমন্বয় করে পণ্য উৎপাদিত হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে অর্থনীতিসহ মানুষের জীবনযাপনের অবনমন ঘটে। ইতোমধ্যে অনেক উৎপাদক উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। খরচ কমাতে নীরবে কর্মী ছাঁটাই করছে। বেতন বৃদ্ধি দূরে থাক, উল্টো কমিয়ে দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কর্মজীবীদের এ অবস্থা হলে, কর্মহারাদের কী অবস্থা, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয় করার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ব্যাংকিং ও সঞ্চয়পত্র খাত চরম আমানত সংকটে ভুগছে। যেসব সাধারণ মানুষ সঞ্চয় করেছিল, তারা জীবনযাপনের খরচ চালাতে সঞ্চয় ভেঙে এবং ব্যাংকে জমানো টাকা তুলে নিঃশেষ হয়ে পড়েছে। ঢাকায় সংসার চালাতে না পেরে অনেকে পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা মিটাতে না পেরে ধুঁকছে। ধার-দেনা করেও তারা সংসার চালাতে পারছে না। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে, পণ্যমূল্য যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্যাস-বিদ্যুতসহ অন্যান্য সেবার মুল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সরকার টিসিবির মাধ্যমে যে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে তা দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে না, তেমনি তার প্রভাব বাজারে পড়ছে না। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বেপরোয়াভাবেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এমন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে যারা আত্মসম্মানবোধ বিবেচনা না করে এখন টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পেতে আগ্রহী। তাদের কাছে এখন আত্মসম্মানের চেয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের তরফ থেকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এটাই একমাত্র কারণ নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা যেমন বাস্তবতা, তেমনি এক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক অর্থনীতি ও বাজারব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও দায়ী। সীমিত সক্ষমতা ও সম্পদের মধ্যে কিভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে আর্থিক খাত ও বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়, সেদিকে নজর দেয়া উচিৎ। পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহের যে চেইন রয়েছে তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। এ কাজটি করতে পারলে সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে যে নাভিশ্বাস, তা কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সরকারকে এ নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। চলমান পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীন ও অসুস্থ হয়ে পড়বে। বোঝায় পরিণত হবে। এ বোঝা নিয়ে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। সরকারের উচিৎ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখার দিকে মনোযোগ দেয়া। টিসিবি’র মাধ্যমে সাময়িক ব্যবস্থা দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ। খাদ্য, কৃষি, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে এ উদ্যোগ নিতে হবে।


See More

Latest Photos