অস্থিরতাজ্বালানি খাতে

Total Views : 185
Zoom In Zoom Out Read Later Print

গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে অস্থিরতার কারণে শিল্পমালিকরা স্বভাবতই চিন্তিত। মঙ্গলবার খবরে প্রকাশ-শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভে গ্যাসের নতুন সংযোগের দাম দ্বিগুণ করার পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, আমদানিকৃত এলএনজির খরচ যা পড়বে, সেই দর অনুযায়ী নতুন শিল্পকারখানার মালিকদের কাছ থেকে গ্যাসের দাম আদায় করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে দ্বিগুণের বেশি। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এটি বাস্তবায়ন হলে ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের শিল্প খাত। নতুন করে কেউ কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে চাইবে না। এছাড়া এক দেশে দুই আইন থাকলে শিল্প খাতে দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। এর ওপর সরকার নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পথে হাঁটলে শিল্প খাত বিশাল সংকটে পড়বে।

জানা যায়, বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি প্রকল্পে বাস্তবায়ন চুক্তি বা ইমপ্লিমেন্ট এগ্রিমেন্ট (আইএ) বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কারণেও বিদ্যুৎ খাতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ প্রকল্পে আইএ হচ্ছে বিনিয়োগের ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌম গ্যারান্টির মতো। এটিকে মূলত বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির (পিপিএ) সম্পূরক চুক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আইএ থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পান। আর বাস্তবায়নকারী কোম্পানি স্বল্পসুদে ঋণসহ দাতা সংস্থা থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএ বাতিল হলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। বিনিয়োগকে তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করবেন। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও সক্ষমতা বিবেচনায় ঋণ সহায়তা দেবে না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে বাস্তবায়নকারী কোম্পানির ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে দাম বাড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এ বাড়তি ব্যয় উৎপাদন খরচের সঙ্গে যোগ হয়ে গ্রাহকের কাঁধেই পড়বে। কাজেই এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এটি বাতিল হওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়বে। এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় শিল্প খাত ও সাধারণ গ্রাহকের কথা চিন্তা করে আইএ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত। ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, অ্যাঙ্গোলা, সেনেগালের মতো দেশগুলোর বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির সম্পূরক চুক্তি হিসাবে আইএ করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বেসরকারি খাতে যত বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সবকটিতেই আইএ ছিল। সেক্ষেত্রে আইএ বাতিলের সিদ্ধান্তে যদি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ না আসার শঙ্কা সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের শিল্প খাত তথা পুরো অর্থনীতির ওপরই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সরকার সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, এটাই কাম্য।

See More

Latest Photos