লক্ষটা মামুলিই ছিল। বোলারদের নৈপূণ্যে ২৫২ রানের সেই লক্ষটাকেই ভারতের জন্য কঠিন করে তুলেছিল নিউজিল্যান্ড বোলাররা। তবে সহজ কিছু ক্যাচ ফেলে ট্রফিটাও যেন হাত থেকে ফেলে দিয়েছে ব্ল্যাকক্যাপসরা। নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির তৃতীয় শিরোপা জিতল ভারত। গতকাল দুবাইয়ে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া লক্ষ্য ভারত টপকে যায় ৬ বল হাতে রেখেই। ৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন লোকেশ রাহুল। সবশেষ আসরে আট বছর আগে ইংল্যান্ডে রানার্স আপ হয়েছিল ভারত। এবার শিরোপা জিতে তিনটি ট্রফি জয়ের প্রথম নজির গড়ল তারা। দেশের মাঠে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের হারের সেই হতাশা হয়তো মুছে যাবে না। তবে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে সাদা বলে ক্রিকেটে নিজেদের দাপট বুঝিয়ে দিল তারা। নানা টুর্নামেন্টে সেমি-ফাইনাল আর ফাইনালে বারবার আটকে পড়ানিউ জিল্যান্ডের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো আবার।
ভারত প্রতিশোধ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন





দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে জয়সূচক রান আসতেই উল্লাসে মেতে ওঠে ভারতীয় ক্রিকেটার ও সমর্থকরা। দুই হাত উঁচিয়ে ছুটলেন তিনি ছুটলেন ক্রিজে সঙ্গী রাহুলের দিকে। ড্রেসিং রুমের সামনে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে ব্যাটিং কোচ আভিষেক নায়ারকে জড়িয়ে ধরলেন বিরাট কোহলি। চওড়া হাসিতে মাঠের দিকে এগোলোন রোহিত শার্মা। যাকে কেউ কখনও হাসতে দেখেননি বলেই শোনা যায়, সেই কোচ গৌতাম গাম্ভিরের ঠোঁটেও দেখা গেল মৃদু হাসি। শ্রেষ্ঠত্বের সময়টাই এমন! অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। এই উল্লাস আর উৎসবের আসল হকদার হতে পারতো পাকিস্তান। তবে ভারতের গোয়ার্তুমির কাছে হার মেনে হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরটা অতৃপ্তি হয়েই রইলো আয়োজক দেশটির। ফাইনাল যে হতে পারতো লাহোরে!
দুবাইয়ে এদিন মাঝারী লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটাই দারুণ করে ভারত। শুবমান গিলের সঙ্গে অধিনায়ক রোহিতের কল্যাণে ওপেনিং জুটিতেই আসে ১০৫ রান। এরপর রোহিত ফিরে গেলে ইনিংস টান্তে থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার। তাকে দারুণ সাহায্য করেন আকসার প্যাটেল। এরপর এ দুই ব্যাটার ফিরলে এক প্রান্ত আগলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন লোকেশ রাহুল। টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলল ভারত। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানকে হারায় তারা। সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বাধা অতিক্রম করে ফাইনালেও জয়ের হাসি ফুটল তাদের মুখে।
তবে ম্যাচের মূল পার্থক্যই গড়ে দিয়েছেন স্পিনাররাই। দুবাইয়ের কিছুটা মন্থর গতির উইকেটে ভারতের স্পিনেই দারুণ শুরুর পড়ে ভেঙে যায় কিউইদের ইনিংস। মিলে মাঝারী পুঁজি। তাই নিয়ে একজন বাড়তি স্পিনারের অভাব ভালোভাবেই টের পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। দারুণ বোলিং করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ও মাইকেল ব্রেসওয়েল। দুইজনই পেয়েছেন দুটি করে উইকেট।
এই জয়ে ২৫ বছরের পুরোনো এক ক্ষতে প্রলেপ দিল ভারত। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেই কিউইদের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। তখন এই প্রতিযোগিতার নাম ছিল আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপ। ২০০০ সালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে নাইরোবিতে কিউইদের বিপক্ষে জিততে পারেনি তারা। ২৫ বছর পর আবারও ফাইনালে কিউইদের পেয়ে এবার আর ভুল করেনি ভারত। দারুণ জয়ে পুরনো সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছে তারা। এমন জয়ের প্রতিক্রিয়ায় হার্দিক পান্ডিয়া বলেন, ‘আইসিসি ট্রফি জেতা সব সময় আনন্দময়। ২০১৭ সালে খুব কাছে গিয়ে পারিনি। এখানে এসে পারলাম। আমি দারুণ তৃপ্ত।’ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘হঠাৎ করেই দলে এসেছি। আমি আশা করিনি যে এমন কিছু হবে। এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার।’ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কোহলি বলেন, ‘এই অনুভূতি অসাধারণ। অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন সফরের পর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছিলাম। এক ঝাঁক তরুণের সঙ্গে খেলতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ছিল। তারা এগিয়ে এসেছে এবং ভারতকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছে।’
ফাইনালে ৮৩ বলে ৭৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত। আর টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। ব্যাট হাতে ২৬৩ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট এই কিউই অলরাউন্ডার। ম্যাচসেরা হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রোহিত বলেছেন, ‘এটা দারুণ ব্যাপার। আমরা টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। তাই ফলটা আমাদের পক্ষে আসায় দারুণ আনন্দিত।’ আর রাচিন বলেছেন, ‘অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতাই বলতে হয়। ফাইনালটা দারুণ ছিল।’