আনফিট যানবাহন উচ্ছেদ করতে হবে সড়ক থেকে

Total Views : 214
Zoom In Zoom Out Read Later Print

রাজধানীসহ সারা দেশে আনফিট ও লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছটা নড়েচড়ে বসে নামকাওয়াস্তে অভিযান চালায়। এতে কিছুদিন এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও পুনরায় রং করে চালানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে অনফিট ও মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহণের চলাচল বেড়ে গেছে। এসব যানবাহন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ও দৃষ্টিকটু, তেমনি বিষাক্ত কালো ধোঁয়া উদগারী, পরিবেশনাশক। কখনো কখনো যান্ত্রিক গোলোযোগে বন্ধ হয়ে মাঝপথেই থেমে যায়। আবার দুর্ঘটনারও বড় কারণ। ট্রাফিক পুলিশের সামনে এসব আনফিট ও লক্কড়ঝক্কড় বাস-যানবাহন চলাচল করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ পরিবহন বিষেশজ্ঞরা বলছেন, এসব আনফিট বাস চিরতরে সড়ক থেকে উঠিয়ে দেয়া জরুরি। এর পরিবর্তে গণপরিবহনে নতুন ও দৃষ্টিনন্দন বাস যুক্ত করা প্রয়োজন। এতে শহরের সৌন্দর্য বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও কমবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, দেশে এখন প্রায় ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। এটি এক ভয়াবহ চিত্র। এসব গাড়ি প্রায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের মতো আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা করেছে। তবে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়টি ভাবছে না। সরকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচল করলেও গণপরিবহনকে আধুনিক করার দিকে নজর দিচ্ছে না। এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলে রাজধানীর গণপরিবহণের চেহারা বদলে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো দেশের আধুনিক গণপরিবহন সে দেশের অন্যতম সৌন্দর্য্যরে প্রতীক। অথচ আমাদের দেশে বছরের পর বছর ধরে গণপরিবহনে এক হতচ্ছিরি পরিস্থিতি চলছে। সাধারণত একটি গাড়ির মেয়াদকাল ২০ বছর ধরা হলেও তা মানা হচ্ছে না। তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪১ শতাংশ বাস-মিনিবাস ২০ বছরের পুরনো। এ হিসাবে, এগুলো চলাচলের উপযুক্ততা হারিয়েছে। অথচ এগুলো দিব্যি সড়কে চলাচল করছে এবং দুর্ঘটনাসহ বায়ুদূষণ ও পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে চলেছে। পরিবেশবিদদের মতে, ইটভাটা, কলকারখানাসহ বায়ুদূষণের ছয়টি কারণের একটি হচ্ছে, আনফিট ও লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের কালো ধোঁয়া। এসব যানবাহন ১৫ ভাগ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এমনিতেই রাজধানী বায়ুদূষণের দিক থেকে প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ তালিকায় থাকছে। রাজধানীতে সুস্থভাবে বসবাসের নির্মল পরিবেশ বলতে কিছু নেই। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, বর্জ্যদূষণসহ হেন কোনো দূষণ নেই যা ঘটছে না। স্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, এসব দূষণের কারণে মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনী, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা করতে গিয়ে তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। পরিবহন খাতে বহুবছর ধরেই নৈরাজ্যকর এই পরিস্থিতি চলছে। সড়ক-মহাসড়কে আনফিট গণপরিবহনসহ থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ব্যাটারি চালিত রিকশা, মোটর সাইকেল ইত্যাদি অবাধে চলছে। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এগুলো বড় ধরনের কারণ হয়ে রয়েছে। পরিবেশও দূষণ করে চলেছে। উচ্চ আদালত এসব যানবাহন চলাচল বন্ধে একাধিকবার নির্দেশনা দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। সরকার একবার নিষিদ্ধ করে, পরে আবার অনুমতি দেয়। অথচ আধুনিক ও স্মার্ট যানবাহনের ক্ষেত্রে এসব পরিবহন ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে রয়েছে। এগুলো দুর্ঘটনা, মানুষের প্রাণহানিসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চললেও কোনো প্রতিকার করা হচ্ছে না। পরিবহন বিষেজ্ঞরা এসব যানবাহন চলাচলের বিকল্প হিসেবে আলাদা লেন করে দেয়ার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। অথচ আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন গণপরিবহনের ব্যবস্থা করলে যাত্রীরা যেমন সেগুলোতে চড়তে উৎসাহী হবে, তেমনি নগরীর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে।

যারা গণপরিবহন ব্যবসায়ী তারা সড়কে নতুন বাস নামালে নিশ্চিতভাবেই পরিস্থিতি বদলে যাবে। তবে বিনিয়োগে অনুৎসাহী হয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ, থ্রি হুইলারসহ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন। এসব থ্রি হুইলার সড়কজুড়ে একদিকে যেমন মালামাল পরিবহন করছে, তেমনি যাত্রীও পরিবহন করছে। এতে অনেক পরিবহন ব্যবসায়ী নতুন বাস নামানোর পরিবর্তে পুরনো আনফিট বাস চালাচ্ছে। সড়ক থেকে যদি ধীরগতির থ্রিহুইলারসহ চিরতরে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়, তাহলে পরিবহন ব্যবসায়ীরা নতুন বাস নামাতে বিনিয়োগ করবে। অবশ্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের এটাও মনে রাখতে হবে, ইতোমধ্যে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় সাত লাখ যাত্রী যাতায়াত করছে। এতে বাসের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে বলে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, মেট্রোরেলে আরামদায়ক ভ্রমণ এবং সময় কম লাগা। পরিবহন ব্যবসায়ীদেরও বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। তাদের মধ্যে আধুনিক গণপরিবহনের সাথে প্রতিযোগিতার মানসিকতা ধারণ করতে হবে। অনফিট ও অস্বাস্থ্যকর বাস না চালিয়ে কিভাবে ফিট, দৃষ্টিনন্দন ও আরামদায়ক বাস চালু করা যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পরিবহন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে সড়ক থেকে আনফিট ও থ্রি হুইলারজাতীয় যানবাহন তুলে দিতে হবে। এসব যানবাহনের জন্য পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, এ ব্যাপারে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়কে জোরালো এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করতে হবে। এসব গাড়ি সড়ক থেকে জব্দ করে সাথে সাথে ‘স্ক্র্যাপ’ বা ধ্বংস করে দিতে হবে।

See More

Latest Photos