যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিল ‘গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মঙ্গলবার। প্রতিটি দেশের নির্বাচন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করে থাকে এ সংস্থাটি। এবারের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১৬৪টি দেশের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪১তম। আর প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তবে সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। রিপোর্টটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তান। আর সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ভুটান, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
সমৃদ্ধির ও স্বাধীনতাসূচক
আটলান্টিক কাউন্সিলের বার্ষিক রিপোর্টটিতে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আমাদের মন খারাপ করে দিলেও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দেয় বটে। আসলে স্বাধীনতার সূচকে দেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে অনেক কিছুই করার আছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনি স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে। রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থার উত্তরণে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত এবং এ কাজে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী দিনের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজসহ সবাইকে অবশ্যই একটি সমঝোতায় আসতে হবে। এক্ষেত্রে একটি জরুরি কথা হলো, শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে আর যেসব দেশ তা নিশ্চিত করতে পারেনি, বিদেশি উদ্যোক্তারা সেসব দেশে আসতে চাচ্ছেন না।
আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতা স্বীকার করতে চাই না। সত্যকে অস্বীকার করা হলে সমস্যা থেকে উত্তরণের তাগিদ থাকে না। সুতরাং এদেশের সীমাবদ্ধতার দিকগুলো চিহ্নিত করে তা স্বীকার করে নিতে হবে এবং সমস্যাগুলোর নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগে শামিল করতে হবে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ঘাটতি রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশ অনেকটা এগিয়ে গেলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। এসব প্রশ্নের মীমাংসা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে না। দুর্নীতি এদেশের এক বড় সংকট। এ সংকটকেও কঠিন হাতে দমন করতে হবে, তা না হলে অর্থনীতিতে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। আমরা যদি মোটাদাগে বলতে চাই, তাহলে বলতে হবে গণতন্ত্র ও সুশাসন, এ দুই বিষয়ে সরকারসহ সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তরিকভাবে এগিয়ে না এলে বৈশ্বিক সূচকে আমাদের অবস্থান হয়তো আরও নিম্নগামী হয়ে পড়বে। আমরা নিশ্চয়ই তা চাই না।