গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মামলায় অভিযোগ গঠনের পর বেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উষ্মা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। বলা হয়েছিল, আপনি থাকেন। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ লোহার খাঁচার মধ্যে ছিলাম। আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এটা ন্যায্য হলো কিনা? আমি যতদূর জানি, যতদিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, ততদিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
মানি লন্ডারিং আইনে ড. ইউনূসের বিচার শুরু
ক্রমাগত হয়রানির মধ্যে আছেন দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। অথচ এসব শব্দ আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সারাজীবন তো আমরা মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসেছি। কিন্তু আমাদের বোধে আসছে না কেন এই হয়রানি করা হচ্ছে? আমি রক্তচোষা, আমি সুদখোর, আমি দেশের শত্রু, আমি পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই– কথার কথা এভাবেই বলা হচ্ছে। এগুলোই হচ্ছে হয়রানি। আমাকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, একজন নিরপরাধ মানুষকে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।
এর আগে গতকাল সকালে ড. ইউনূসসহ অপর আসামিরা আদালতে হাজির হন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। পরে বিচারক বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য রাখেন। তবে অভিযোগ গঠনের এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম, সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নুরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কামরুল হাসান।
গত ২ জুন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য গতকাল দিন রাখা হয়েছিল। এদিন আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহীনুর ইসলাম অনিসহ কয়েকজন।