সহিংস করা হয়েছে অহিংস ছাত্র আন্দোলনকে উস্কানি দিয়ে : কাজী ফিরোজ রশীদ

Total Views : 21
Zoom In Zoom Out Read Later Print

জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ আমরা দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের সামনে কিছু কথা বলার জন্য হাজির হয়েছি। গোটা দেশে এখন কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা আপনারা সবাই জানেন। এ বিষয়ে কিছু কথা বলার আগে আমি প্রথমেই কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে যারা প্রান হারিয়েছেন- তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং পরিবার পরিজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, ছাত্রদের এই আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- ছাত্রদের দাবী যৌক্তিক এবং আমরা তা সমর্থন করি। কারণ, ছাত্ররা কোটার সম্পূর্ণ বাতিল চায়নি। তারা সংস্কার চেয়েছে। দেশে সরকারী চাকুরীর ৫৬% কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে- এটা আমরাও মানতে পারি না। কারণ, তাহলে মেধার মূল্যায়ন হয় না। ছাত্ররা চেয়েছে কোটা থাকবে। তবে তা বিশেষ ক্ষেত্রে এবং তার হার ৫% শতাংশের বেশী নয়। এসব বিষয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মিমাংসা করা উচিৎ ছিল।

দ্বিতীয়ত: কোটা যেখানে সরকারই বাতিল করেছিলেন- সেটা হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হলো। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে- কোটা থাকবে। তবে কোটার হার কমানো বা বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে। ফলে রায় অনুসারেই- সরকারের পক্ষে ছাত্রদের দাবী মেনে নেয়ার সুযোগ আছে।

তৃতীয়ত: সরকারের পূর্বেকার সিদ্ধান্ত এবং ছাত্রদের বর্তমান দাবীর মধ্যে বিপরীত মূখিতা নেয়। সরকার এর আগে বাতিল করেছিলেন এবং ছাত্ররা এখন সংস্কার চেয়েছে। এ দু’য়ের মধ্যে সমন্বয় হওয়া সম্ভব ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলা হয়েছে।

চতুর্থত: সরকার হাইকোটের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন। এই পর্যায়ে এটর্নি জেনারেল সুপ্রীম কোটের শুনানী- এগিয়ে নিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাই আমরা দাবী জানাবো- কোনোভাবে কালক্ষেপণ না করে আগামী রবিবারই সুপ্রীম কোর্টে মেনশন করে- সিভিল আপীলটি দ্রæত শুনানী করা হোক। এর জন্য এক মাস দেরী করতে হবে কেনো? তাতে যদি আন্দোলন আরো বেগবান হয়- কিংবা যদি আরো প্রানহানি ঘটে- তার দায় দায়িত্ব কে নেবে?

পঞ্চমত: সাধারন ছাত্রদের এই আন্দোলন দমন করতে ছাত্রলীগকে নামানো হলো কেনো? এই সুযোগ নিয়ে- অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। ফলে এতদিন যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিলো- সেটা এখন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। তাই আমরা দাবী জানাবো- অবিলম্বে ছাত্রলীগকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়া হোক। অন্যথায় সহিংসতা এবং প্রানহানি আরো বেড়ে যাবার আশংকা রয়েছে।

ষষ্ঠত: কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটা গ্রহণযোগ্য ও সম্মানজনক সমাধনের জন্য সরকারের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে- আর কোনো ভাবে কালক্ষেপণ না করে আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে। সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবীন প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করা হোক। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পৌছাতে হবে।

সপ্তমত: এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার প্রসঙ্গে কথা এসেছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন- তা হয়তো বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ছাত্রদের শ্লোগান নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ দেশে আর কখনো রাজাকার সৃষ্টি হবে না এবং একটি জাতীর জন্য মুক্তিযুদ্ধ একবারই হয়। আমাদেরও তাই হয়েছে। এ দেশে দ্বিতীয় বার কোনো বীর মুক্তিসেনা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নাই।

সর্বশেষ বলতে চাই- আমরা আর কোনো রক্তপাত, প্রাণহানি, সহিংসতা, জন দুর্ভোগ দেখতে চাই না। অচিরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিসমাপ্তি দেখতে চাই। আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি আহবান জানাতে চাই যে- তোমরা কোনো ভাবেই এমন কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে যেওনা- যেটা সুযোগ সন্ধানিরা যেনো ব্যবহার করতে না পারে। আমরা বিশ্বাস করি- কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। সরকারের প্রতি আমাদের দাবী, এ বিষয়ে আর জল ঘোলা না করে অচিরেই আইনগত এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হোক। সে পর্যন্ত সকল পক্ষকেই সহনশীলতার পরিচয় দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

ফিরোজ রশীদ আরো বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমাদের এই বক্তব্য- দেশবাসি, সরকার এবং আন্দোলনকারীদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ইতোমধ্যে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। বিশ্বাস করি- অচিরেই হয়তো ছাত্রদের দাবী আদায় হবে। কিন্তু যে অমূল্য প্রানগুলো আমরা হারিয়েছি তাদের আর ফিরে পাবো না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন ও মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ। উপস্থিত ছিলেন শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, শাহ জামাল রানা, উপদেষ্টা হাফছা সুলতানা, ভাইস-চেয়ারম্যান শাহআলম তালুকদার, সারফু্দ্দিন আহমেদ শিপু, যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, শেখ মাসুক রহমান, অ্যাডভোকেট ছেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, এসএম হাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনাজ পারভীন, মো. রিফাতুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আকরাম আলী শাহীন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, যুগ্ম-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক চিশতী খায়রুল আবরার শিশির, যুগ্ম-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, যুগ্ম-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের সিদ্দিকী প্রমূখ।

See More

Latest Photos