অ্যামনেস্টির মহাসচিবের খোলাচিঠি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি

Total Views : 56
Zoom In Zoom Out Read Later Print

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠিতে বাংলাদেশে চলমান ‘বাংলা ব্লকেড’ কোটা সংস্কার বিক্ষোভের উপর সহিংস দমন চালানোর জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার পরিসমাপ্তি ঘটাতে ও এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়ে দুই শতাধিক লোকের হত্যার জন্য বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জরুরি ও বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এই চিঠিতে আরো লেখা হয় ২৮ জুলাই ২০২৪’এ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন যে এই সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা ১৪৭, তবে প্রথম আলোর মতো পত্রিকায় বলা হয়েছে বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী যে অন্তত ২১১ জন এই সহিংসতায় মারা যান, যা কিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময়ে অন্যতম বৃহত্তম প্রাণনাশী ঘটনা।

বিক্ষোভ দমনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ (বিজেবি) এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে গোটা দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়। এত বেশি সংখ্যক প্রাণহানি দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবাদ ও ভিন্ন মত প্রদর্শনের ব্যাপারে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ অসিহষ্ণুতার অভিযোগকে তুলে ধরে।

তিনি বলেন, 'প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তিসহ, অবৈধভাবে শক্তির ব্যবহার, বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি কর্তৃপক্ষের উদাসীন অবজ্ঞা এবং রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে দায়িত্ব পালন করতে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার নিদর্শন।'

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ওই চিঠিতে আরো লেখেন, গত ১০ দিনে প্রতিবাদ দমনে কর্তৃপক্ষ যে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে , অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল তার দিকে নজরদারি করেছে এবং তা নথিবদ্ধ করেছে। দু’টি পৃথক ঘটনায় এমন প্রমাণ যাচাই করে দেখেছে যেখানে ছয় দিনব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বিধিনেষধ চলার সময়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর অবৈধ শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, প্রাণঘাতী ও প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরো লেখেন, 'আমাদের তদন্তে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের উপর পাখি মারার মতো গুলি চালানো হয়, শিক্ষার্থীদের নিজেদের এলাকায় কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয় এবং কোন রকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একে ধরণের রাইফেল ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনী।' সেক্রেটারি জেনারেল লেখেন, 'এই প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে আপনার শাসক দলের শিক্ষার্থী শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সহিংসতা শুরু করে, প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থী প্রতিবাদকারীদের উপর আর তার পর ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের উপর।'

ক্যালামার্ড লিখেছেন, 'এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যেই ১৮ জুলাই ২০২৪ থেকে বাংলাদেশের জনগণ গোটা দেশজুড়ে ইন্টারনেট শাটডাউনের সম্মুখীন হন। এই শাটডাউনের আগে গোটা দেশে মোবাইলে ইন্টারনেট পাবার সুবিধা অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয় এবং কোনো কোনো এলাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বন্ধ করা হয়। ঢাকার মেট্রপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) ১৯ জুলাই ২০২৪ ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করে রাজধানী ঢাকায় সব ধরণের সমাবেশ ও মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এবং কারফিউ জারি করে পুলিশকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়।'

এই চিঠিতে ব্রিটেনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয় একতরফাভাবে গোটা দেশে ইন্টানেট পরিষেবা বন্ধ করা ঢাকায় প্রতিবাদ প্রদর্শনের উপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা এবং দেশব্যাপী দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ ছিল মতো প্রকাশের ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের উপর নজিরবিহীন আক্রমণ। এই ধরণের ঢালাও নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব লংঘন কারণ রাষ্ট্রটি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় দায়বদ্ধ।

তিনি আরো লেখেন, মিডিয়ি রিপোর্ট অনুযায়ী বিরোধী নেতৃবৃন্দ, সক্রিয়বাদী, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীসহ ১০,০০০ লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

See More

Latest Photos