কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম, পিপিএম । একজন সাবেক সফল সেনা কর্মকর্তা। একজন সুদক্ষ পাইলট এবং এভিয়েশন ট্রেইনার। বাংলাদেশে যে কয়জন ডাবল উইং সেনা পাইলট রয়েছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাসেল তাদের অন্যতম। শৈশব থেকেই দুরন্ত নজরুল পরোপকার এবং দেশপ্রেমে ছিলেন অগ্রগামী। আদর্শ শিক্ষক পিতার সমগ্র জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতেই যোগ দেন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে। শিক্ষক পিতার আদর্শ, অন্তরের সুপ্ত দেশপ্রেম আর সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে অকুতভয় পেশাজীবন শুরু করেন তিনি। তার সহকর্মী, আত্মীস্বজন ও প্রতিবেশীদের নিকট থেকে জানা যায় যে, রাসেল (লে. কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর ডাক নাম) সবসময়ই একজন প্রতিবাদী আর স্পষ্টবাদী মানুষ।
কে বানালো তাকে ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড?





পেশাগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে সে সজ্জন, বন্ধুবৎসল এবং কিছুটা আবেগীও। কিন্তু কখনও কারও ক্ষতি বা অকল্যাণ চিন্তা করে না। সামরিক জীবনের শৃঙ্খলা অবসর জীবনেও তার আরাধ্য এবং নিত্য চর্চার বিষয়।
২০১৮ সালে সামরিক জীবন থেকে আবসর নিয়ে তিনি কোন কর্পোরেট কোম্পানীর বড় পদে চাকুরীতে যোগ দেন নি। বরং উদ্যোক্তা হয়ে নিজস্ব কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন বহু মানুষকে চাকুরী। স্বপ্ন দেখেছেন নিজ জেলা শরীয়তপুরের মাটি ও মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিবেন। বিশেষ করে তার উপজেলা জাজিরার মানুষের ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে বহুমুখী সামাজিক উন্নয়ন ও সেবামূলক হাজ শূরু করেন। তার সেবা, শ্রম এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখে জাজিরার সাধারন মানুষ তাকে আরও আপন করে কাছে টেনে এলাকার অভিভাবক ভাবতে থাকে। তরুণ প্রজন্ম তার সুদক্ষ নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে থাকে। একসময় স্থানীয় সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গণে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেন এই সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাসেল মোড়ল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় স্থানীয় সংসদ সদস্য (সাবেক) ইকবাল হোসেন অপু এবং বিএনপির একাংশ তাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দী এমনকি প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। ধীরে ধীরে এই ভাবনা প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিরোধতিায় রূপ নেয়।
জাজিরায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়; ৫ই আগস্ট ২০২৪ ইতিহাস কাঁপানো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের পতনে সাবেক সেনা অফিসার হিসেবে সৈয়দ নজুরুল ইসলাম রাসেলও রেখেছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা। পাশে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার। অথচ সেই মানুষটাকেই রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে বা মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কোন কোন মিডিয়া প্রচার করেছে। এবিষয়ে লে. কর্নেল (অব) নজরুল ইসলাম রাসেলের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে ঘিরে বহুল আলোচিত একটি অসত্য বিকৃত ঘটনা , যেটা কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়া শুধুমাত্র শুনেই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বেশকিছু সংখ্যক মানুষ মুখরোচক কল্পকাহিনী ছড়িয়ে আমাকে ঘৃণার পাত্রে পরিণত করছেন। প্রাথমিকভাবে এটি একটি সাধারণ মিডিয়া ট্রায়াল থাকলেও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইন্ধনে বর্তমানে এটি টক অব দি কান্ট্রি তে রুপান্তরিত হয়েছে। শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় খাওয়া এবং হঠাৎ দেখা হওয়া একজন সোনা ক্যাপ্টেনের সাথে আলাপ চারিতার ফুটেজ এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উদ্বিগ্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা, যথাযথ উপযুক্ত প্রমাণ বা তদন্ত ছাড়াই আমাকে অপরাধী হিসেবে মিডিয়া ট্রায়াল দিয়ে ফেলেছেন, অথচ যেখানে আমি আদৌ দোষী নই। তাহলে আমাকে দোষী করে আলোচিত করে মূলত ডাকাতি আসল মাস্টার মাউন্ডকে আড়াল করা হচ্ছে।
আমি বিগত ১৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে পূর্ব নির্ধারিত পারিবারিক সফরের জন্য বিদেশে এসেছি। আমার আগমনের পরের দিন, স্যোসাল মিডিয়ায় আমি “মোহাম্মদপুর ডাকাতি” শিরোনামে একটি ভিডিও দেখতে পাই। ভিডিও / সংবাদ দেখার পরে বিভিন্ন সুত্রে কথা বলার পরে জানতে পারি এখানে ৮/৯ জন RAB সদস্য, একজন অতিরিক্ত এসপি এবং একজন চাকুরিরত মেজর পদবীর কর্মকর্তার নেতৃত্বে উক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য , কিছু অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং কতিপয় বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ সাথে উপস্থিত ছিল।
আমি আমার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট একটা ভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন লোকের সাথে আলোচনা করতে সেদিন মোহাম্মদপুর গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় অপেক্ষা করছিলাম। সেই মুহুর্তে ওখানে ক্যাপ্টেন আশিক প্রবেশ করলে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়ে যায় এবং পূর্ব পরিচিত হিসেবে কুশলাদি বিনিময়ও হয়। আমি ঐ সময়ে মি. আশিকের সাথে ২/৩ জন লোককে রেষ্টুরেন্টে দেখেছি। আমি আমার একান্ত প্রয়োজনে কিছুক্ষন ওখানে অবস্হান করি , অতপর খাবার খেয়ে, কথা বলে আমার এলাকায় ফিরে আসি। রেস্তোরাঁটির অবস্হান point of occurrence (PO) থেকে বেশ দূরে (যেমনটি আমি পরে শুনেছি)।
যেহেতু অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন পদবীর উক্ত কর্মকর্তা এহেন অপকর্ম/অপারেশনের সাথে জড়িত ছিল (পরবর্তীতে জেনছি), তাই পরিস্থিতি না বুঝে বা মূল্যায়ন না করেই প্রাথমিকভাবে লোকেরা ঐ রেস্টুরেন্টের ভিডিও ফুটেজ এবং অসত্য তথ্যের নিউজ দেখে অনেকেই আমাকে ভুল বুঝতে শুরু করেন, যা সময়ের সাথে সাথে বহুগুণে বেড়ে যায়। এই সুযোগে আমার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চেষ্টা করে চলেছে ঘটনাটি আমার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে এই ঘৃণ্য অশুভ কাজের পরিকল্পনাকারী হিসাবে তুলে ধরতে। যা কস্মিনকালেও সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার; যা আমার সামাজিক-ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফসল!
এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আমার নিজ এলাকা শরীয়তপুরে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা সহ ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সময় ও অর্থ এমনভাবে ব্যবহার করেছে , যা আমার অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে তৈরীকৃত অবস্থান, সম্মান কে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে একটুও সময় নেয়নি। বিষয়টিতে তারা এতটাই সক্রিয় যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল-জাজিরাসহ দেশের প্রায় সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ঘটনাস্থল বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিডিও ক্লিপ দিয়ে এই বানোয়াট খবর প্রচার করেছে। এমনকি মামলার এজাহারেও নেই আমার নাম বা কোন সংশ্লিষ্টতার লেষমাত্র। আথচ রাতারাতি আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো ‘ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড’! কি দুর্ভাগ্য আমার!
আমি স্থান, সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার। আমি নির্দোষ। আমি বিশ্বাস করি সঠিক তদন্ত, আইন এবং বিজ্ঞ আদালতের ন্যায় বিচারের মাধ্যমে শীঘ্রই আমি অভিযোগ মুক্ত হয়ে আমার সম্মান ফিরে পাবো ইন শা আল্লাহ। সকলের প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, দয়া করে গভীর চিন্তা এবং বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি নিশ্চিত, সত্যের জয় হবেই। অপেক্ষা শুধু সময়ের।”
মামলার এজাহার বিশ্লেষন করে কোথায়ও মিডিয়ায় অভিযুক্ত মোহাম্মদপুরে ডাকাতির কথিত মাস্টারমাইন্ড লে. কর্নেল (অব) সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাসেলের কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলেও কার স্বার্থে কে বানালো তাকে ‘ডাকাতির মাস্টার মাউন্ড’? এই প্রশ্ন এখন শরীয়তপুরের চা দোকান থেকে আদালত পাড়ায় গুণগুণ করছে। পাশাপশি একটা বড়ু প্রশ্ন এখন সবার মনে- লে. কর্নেল রাসেলের বিরুদ্ধে করা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের মাস্টার মাউন্ড’-টা কে?