সড়কে নৈরাজ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত। এ খাতে একটি বড় সমস্যা হলো চাঁদাবাজি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে বিভিন্ন খাতের চাঁদার নিয়ন্ত্রকরা। বর্তমানে নগর পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য না থাকলেও থামেনি বাড়তি ভাড়া আদায়। পরিবহণসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তায় যেহেতু বাড়তি খরচ নেই, সেহেতু এখন চাইলে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া আদায় করেও যাত্রীসেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব। জানা যায়, বিআরটিএ সর্বশেষ যে ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করেছিল, তাতে বাস মালিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছিল। যুগান্তরে প্রকাশিত তথ্যমতে, শনিবারও রাজধানীর গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। কোনো পরিবহণেই চোখে পড়েনি বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা।
গণপরিবহণে অব্যাহত নৈরাজ্য: এ খাতেও সংস্কার প্রয়োজন
এছাড়া বেশকিছুদিন আগে চালু হওয়া ই-টিকিটিংয়ের ডিভাইসও নেই সুপারভাইজারদের হাতে। তারা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করলেও এসব যেন দেখার কেউই নেই। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নেওয়া কিছু উদ্যোগের ফলে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছেন। দুঃখজনক হলো, শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় সড়কে যে শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা এখন আর দেখা যায় না। গত দুদিন ধরে আবার আগের মতোই রাজধানীতে সড়কের মাঝখানে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর দৃশ্য চোখে পড়ছে। বিভিন্ন যানবাহনের ওভারটেক করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। পথচারীদেরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে দেখা গেছে।
বস্তুত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো যে ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে তা-ও বহুল আলোচিত। সড়কে চলছে লাখ লাখ অবৈধ যানবাহন। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ মোটেই দৃশ্যমান নয়। ফলে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ না করা। প্রশ্ন হলো, এ নিয়ে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না কেন? পরিবহণ খাতে সুশাসনের অভাবের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কাজেই এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
বস্তুত জনবহুল এদেশে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি কঠিন। এ কাজে সফল হতে হলে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ক সমস্যাগুলো চিহ্নিত। এখন দরকার সময়োপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। তবে দুর্নীতি রোধ করা না গেলে কাক্সিক্ষত ফল মিলবে কিনা সন্দেহ।