কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াবে না বিশেষজ্ঞ মতামত

Total Views : 86
Zoom In Zoom Out Read Later Print

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার বিকালে কাশ্মীরের পেহেলগামের পর্যটনকেন্দ্র বৈসারণ উপত্যকায় এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন (নেপালের নাগরিক) ছাড়া বাকি সবাই ভারতীয়। এদিকে ভারত- পাকিস্তানের উত্তেজনার ঢেউ লেগেছে বিশ্ব রাজনীতিতেও। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া উভয় দেশের প্রতি ‘চরম সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই উত্তেজনা যুদ্ধের দিকে যাবে না। তবে তারা বলছেন, যদি উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নেয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।




ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই, আমরা এখন কাশ্মীরের অবস্থা নিয়ে কোনো অবস্থান নিচ্ছি না। আর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তান ও ভারতের প্রতি ‘চরম সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, উভয় দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে এবং গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
ভারত-পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গেই কমবেশি ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে বাংলাদেশের সব সরকার। সেই তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিভিন্ন সময়ে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বের মানুষ দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দেশ হিসেবে দেখছে না। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় যখন উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়, তখন (বহির্বিশ্ব) বাংলাদেশকে তার মধ্যেই দেখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যুদ্ধের দিকে যাবে না বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ফলে উত্তেজনা কমে আসবে বলেই বিশ্বাস করি। আর এখনই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে মনে করি না। তবে যদি উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নেয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আগেও এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবার ঠিকও হয়েছে। ১৯৯৯ সালে, ২০০৮ সালে মুম্বাই আক্রমণের সময় এবং ২০১৯ সালে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। আসলে ভারতে কিছু হলে পাকিস্তানকে আর পাকিস্তানে কিছু হলে ভারতকে দোষারাপ করা হয়। কাশ্মীরের ঘটনায় ভারত সিন্ধু নদীর আলোচনা স্থগিত করেছে, বাতিল করেনি। উভয় দেশই চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর। আপাতত বাংলাদেশের চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশ এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনো ধরনের বেফাঁস কথা বলা যাবে না। এখানে খুবই সতর্ক হতে হবে। আমাদের বক্তব্য ও অবস্থান হতে হবে সংযত ও নিরপেক্ষ। ভারত-পাকিস্তান কারও বিরুদ্ধে যেন বাংলাদেশকে ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি।
ভারত শাসিত কাশ্মীরে হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে স্বল্প পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠন পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই- তৈয়াবার সঙ্গে যুক্ত বলে ভারতের দাবি। ভারতের পুলিশ বলছে, পর্যটকদের ওপর হামলাকারীদের দুজন পাকিস্তানের নাগরিক। এই হামলায় পাকিস্তানের মদদ আছে অভিযোগ তুলে প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। এ ছাড়া পাকিস্তানকে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেওয়া হয়। কাশ্মীরে হামলাকারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে পাল্টা হিসেবে ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক হয়। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ভারতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের মানুষের অধিকার ক্ষুণœ করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে।

-রুম্মান শারমিন স্নেহা

See More

Latest Photos