প্রকৌশলী ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালকের জাল সনদের কারবার

Total Views : 35
Zoom In Zoom Out Read Later Print

দুই প্রকৌশলী ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মিলে গড়ে তুলেছিলেন জাল সনদের চক্র। সনদ ও নম্বরপত্র, প্রশংসাপত্র সবই তাঁরা সরবরাহ করতেন। সনদের জন্য নেওয়া হতো এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সনদের দাম নির্ভর করত ধরনের ওপর। এক ধরনের সনদ দেশে-বিদেশে অনলাইন যাচাইয়েও ধরা পড়ে না। আর অন্যটি দেখতে হুবহু আসলের মতো। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই জালিয়াতির সঙ্গে কয়েকটি নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। সনদ জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার চারজন হলেন– প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, তাঁর স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইয়াসিন আলী ও বন্ধ থাকা দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপু। শুক্রবার সকালে লালবাগের বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মীরি গলি এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মিতু ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযানে বিপুল জাল সনদ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দেশের নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন, বিভিন্ন বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসির নম্বরপত্র-সনদ সরবরাহ করে আসছিলেন। এগুলো বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা সনদের মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হয়। পরে সেগুলোকে অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্তও করা হয়। ফলে অনলাইন যাচাইয়ে গেলে সনদ আসল হিসেবেই দেখা যায়। এ ঘটনায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোর্ডের অসাধু ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিবি জানায়, লালবাগের দুই কক্ষের বাসাটিতে দামি ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, এমব্রস মেশিন বসিয়ে চলছিল জালিয়াতির কার্যক্রম। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা ফাঁকা সনদে ইচ্ছেমতো নাম-নম্বর বসিয়ে জাল সনদ তৈরি করত। এ ছাড়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত জাল সনদগুলো ছাপিয়ে এনে নিজেও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করত।

অভিযানসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রাইভেট স্টাডি একাডেমি, এডুকেশন হেল্পলাইন লিমিটেড, ভিসা এক্সপার্ট, মিনা ডেভেলপার্স লিমিটেড, নিউজ বেঙ্গলি ডটকম নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। তাঁর লেখা বইও আছে। এগুলোর আড়ালে তিনি জাল সনদের কারবারে জড়িত। তিনি বিজনেস ভিসায় বেশ কয়েকবার বিদেশে গেছেন। মুদ্রাপাচার সংক্রান্ত কোনো বিষয় আছে কি না তা জানতে সিআইডির সহায়তা নেওয়া হবে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কতজনের কাছে এসব জাল সনদ গেছে, তা জানার চেষ্টা করা হবে। কারণ এসব জাল সনদধারীর কারণে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

ডিবি জানায়, একটি সনদ তৈরিতে তাদের খরচ হত ৫০ থেকে ১০০ টাকা। অথচ এগুলো বিক্রি হত লাখ টাকায়। ফলে চক্রটি এভাবে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে। এই অর্থে তারা ঢাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছিলেন। তারা ফ্ল্যাট কিনেছেন, ডেভেলপার কোম্পানি বানিয়েছেন।


See More

Latest Photos