সরকার চিনির কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর নির্ধারণ করলেও আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না। বাজারে আগে বেড়ে থাকা দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্যটি। খুচরা পর্যায়ে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এ ছাড়া সবজির বাজারে বেশ উত্তাপ দেখা গেছে। দুই-তিনটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। আরও বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। দাম বাড়ার তালিকায় আবারও উঠে এসেছে ব্রয়লার মুরগি। তবে নতুন ধান উঠতে শুরু করায় কিছুটা নামছে চালের দর। রাজধানীর হাতিরপুল, মহাখালী ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বাড়তি দামেই বিক্রি চিনির দর কেউ মানেনি,





আমদানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত সোমবার খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে সরকার গত ৭ এপ্রিল খোলা চিনি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল। তবে এ দর মানেননি ব্যবসায়ীরা। তখন থেকেই খুচরা পর্যায়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এখন আবার নতুন দর বেঁধে দিলেও কোনো কাজে আসেনি। রাজধানীর কোথাও নতুন দরে চিনি পাওয়া যায়নি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন দামের প্যাকেটজাত চিনি এসেছে বাজারে। তবে কোম্পানিগুলোর ডিলারদের থেকে প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকা ১২৫ টাকা দরেই তাদের চিনি কিনতে হচ্ছে। সঙ্গে এক কেজি গুঁড়া দুধ কিংবা আটা কিনতে হয়। এ ছাড়া খোলা চিনির কেজি এখনও পাইকারি পর্যায়ে ১২৮ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে তাঁদের। আবার কেউ কেউ প্যাকেটে লেখা থাকা দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করতে পারবেন না– এমন ভয়ে প্যাকেট চিনি রাখছেন না।
কারওয়ান বাজারের মালিহা স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. রিয়াজ বলেন, ‘আজই (গতকাল) প্রথম বাড়তি দরের প্যাকেট চিনি এসেছে। তবে ১২৫ টাকা দরেই ডিলাররা আমাদের চিনি দিয়েছেন। সঙ্গে বাধ্যতামূলক এক কেজি গুঁড়া দুধ কিনতে হয়েছে। তবে কোনো বিক্রয় রসিদ দেননি। তাই প্যাকেটের দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। একই বাজারের রতন স্টোরের মো. রতন বলেন, ‘প্যাকেটে লেখা থাকা দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করতে হবে। এতে সরকারের অভিযানের মুখে পড়তে হবে। তাই চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’
তবে দাম বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সরকার। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। তাঁরা এ দামে বাজারে বিক্রি করছেন কিনা, তা দেখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে বাজারে নতুন বাড়তি দরের ভোজ্যতেলের সরবরাহ বেড়েছে। পণ্যটির কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
রোজার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজার সময় ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দর ধাপে ধাপে বেড়ে তিন দিন আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্চের পর থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় পণ্যটির দাম বাড়ছেই।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়তে থাকলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ব্রয়লার মুরগির বাজারে প্রায় এক বছর ধরে চলছে অস্থিরতা। গত সপ্তাহে ২০০ টাকায় নেমে এলেও আবার বেড়েছে। খুচরা বাজারে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার। একই সঙ্গে সোনালি মুরগির দরও কিছুটা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়।
রোজার ঈদের পর থেকেই বাজারে সবজির দাম চড়া। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো। ঢেঁড়স, পটোল আর টমেটো ছাড়া ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি মিলছে না। কোনোটির দাম সেঞ্চুরির কাছাকাছি। বাজারে কাঁচামরিচের ঝাল আবারও বেড়েছে। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁকরোল, ঝিঙ্গে ও গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। করলা ৬০ থেকে ৮০, বেগুন ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে চালের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বোরো মৌসুমের ধান উঠতে থাকায় বাজারে নতুন চালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে সব ধরনের চালের কেজিতে দু-এক টাকা করে দাম কমতে দেখা গেছে।