নৌকার হার নেতাদের স্বার্থের কাছে

Total Views : 50
Zoom In Zoom Out Read Later Print

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পদধারী নেতাদের টাকার কাছে বিক্রি হওয়া এবং মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন না করার কারণে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার নির্বাচন-পরবর্তী দুটি মূল্যায়ন সভায় তৃণমূল নেতাকর্মীর কাছ থেকে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে কাছে পেয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় পদধারী নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার নানা দিক তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, মুখোশধারী দলীয় নেতাকর্মীর সামান্য স্বার্থের কারণে আজ নৌকার প্রার্থী এমনভাবে হেরেছে। কাশিমপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন সভায় ওই থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম শাহীন বলেন, নির্বাচন পরিচালনাকালে পদধারী দলীয় নেতারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। নির্বাচনী পোস্টার বা লিফলেট নেওয়ার জন্য দলীয় কর্মীরা এলে তাঁদের দেওয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্র কমিটির নামে তামাশা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ কর্মীদের সমন্বয়ে নৌকার প্রতীকের ভোটকেন্দ্র কমিটি করা হয়। কেন্দ্র পরিচালনার জন্য আনা খরচ কোনো নেতাকর্মীকে দেওয়া হয়নি।

কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান বলেন, কাশিমপুরে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। নৌকার ব্যাচ গলায় ঝুলিয়ে তাঁরা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জন্য ভোট চেয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, টেবিল ঘড়ি বিজয়ী হওয়ার পর ওই সব নেতাই উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্মীরা বলেন, ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মুখোশধারী ওই সব নেতা নৌকার পোস্টার পর্যন্ত লাগাতে দেননি। সব পোস্টার ঘরের ভেতর রেখে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মী বলেন, এসব তদারকি করার মতো কেউ ছিল না। এরই ফাঁকে জাহাঙ্গীর তাঁর কর্মীদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। দায়িত্বশীলদের অদক্ষতাকেও দায়ী করেন তিনি।

কোনাবাড়ী এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন সভায় অভিন্ন বক্তব্য দেন নেতাকর্মীরা। তাঁরা বলেন, জাহাঙ্গীরের কালো টাকার কাছে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা বিক্রি হয়েছেন। এ কারণে আজ নৌকার পরাজয় হয়েছে।

কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান মনির বলেন, কোনাবাড়ী থানা  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী থানা যুব মহিলা লীগের সভাপতি কামরুন্নাহার মুন্নী টেবিল ঘড়ির পক্ষে নির্বাচন করেছেন। মুন্নীকে একটি কেন্দ্রপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, অথচ নির্বাচনের দিন বিকেল ৩টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের ১০ দিন আগে আনিসুর রহমান ৩০০ নেতাকর্মীকে নিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমে গিয়ে উৎসব করেছেন। জাহাঙ্গীরের সময় তাঁকে পদ দেওয়া হয়েছিল বলেই হয়তো তাঁর বিরোধিতা করতে পারেননি। একই রকম অভিযোগ তোলেন কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। কাশিমপুরে ‘গাদ্দারি’ করা আওয়ামী লীগের পদধারী কয়েকজন নেতার সামনেই কর্মীরা প্রকাশ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের উপস্থিতিতেই এক পর্যায়ে সেখানে হট্টগোল শুরু হয়। পরে হ্যান্ডমাইক নিয়ে আজমত উল্লা খান সবাইকে ধৈর্য ধরতে বললে হইচই থামে।

সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভেতরে থেকে যাঁরা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারাতে মাঠে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূল্যায়ন সভায় নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মামুন মণ্ডল, কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
 

See More

Latest Photos