গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

Total Views : 175
Zoom In Zoom Out Read Later Print

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ হওয়ায় ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডে আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি নৃশংস হামলা বন্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আনা এ প্রস্তাবের প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সমর্থন জানালেও ইসরাইল এ বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কিছু জানায়নি। উল্লেখ্য, গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতা বন্ধে এর আগেও কয়েকবার নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করায় সেসব প্রস্তাব আর গৃহীত হয়নি। তবে গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতা বন্ধের প্রতিবাদে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে ছাত্রবিক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে নিরাপত্তা পরিষদে এ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করেন। এখন দেখার বিষয় ইসরাইল এ প্রস্তাবে সমর্থন জানায় কিনা।

প্রস্তাবটিতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া, বন্দিবিনিময়, গাজা পুনর্গঠন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের এলাকায় ফিরিয়ে আনা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে গাজায় ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি চলবে। এ সময় হামাসের হাতে বন্দি থাকা জিম্মিদের একাংশকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরাইল। একইসঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে গাজার সব এলাকায় বাধাহীনভাবে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা সরবরাহের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। এ সময় গাজা থেকে সব ইসরাইলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।

ইসরাইল এ প্রস্তাব মেনে নিলে তা হবে বিশ্বের জন্য একটি স্বস্তির বিষয়। গাজায় আট মাসের ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন প্রায় ৮৫ হাজার ফিলিস্তিনি। আর ধ্বংস হয়ে গেছে গাজাবাসীর ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এ উপত্যকার সিংহভাগ অবকাঠামো। কাজেই শুধু যুদ্ধবিরতি এই মানবিক বিপর্যয়ের সমাধান নয়, প্রয়োজন পুনর্গঠন, প্রস্তাবে যার উল্লেখ আছে।

সন্দেহ নেই, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার সরকার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বিষয়ে গড়িমসি করবেন। কারণ তার সরকারের দুই মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল না করে নেতানিয়াহু যদি কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন, তাহলে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হবে। তবে আমরা আশা করব, তিনি হীন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থের চেয়ে মানবিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন। আমরা মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এটি শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, ইসরাইলিদেরও শান্তি ও স্বস্তির রক্ষাকবচ হবে। অচিরেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গাজাসহ সব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি নৃশংসতার অবসান ঘটবে, সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মতো আমরাও এ প্রত্যাশা করছি।

See More

Latest Photos