আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। বস্তুত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াই গ্যাস সংকটের কারণ। বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশনসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়লেও গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গিন। জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল-কোনাবাড়ী, মৌচাক, সফিপুর ও চন্দ্রা এলাকা প্রায় গ্যাসশূন্য। সম্প্রতি ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে ডেমরা, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গ্যাস সংকটের কারণে ধস নেমেছে শিল্পকারখানার উৎপাদনে। গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল মিলগুলোর উৎপাদন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় বাতিল হচ্ছে ক্রয়াদেশ। এ অবস্থায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি বাস্তবিকই উদ্বেগজনক। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে গ্যাসের এমন সংকট চলতে থাকলে এ খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। কাজেই সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া।
গ্যাসের তীব্র সংকট
মনে রাখা দরকার, দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে, তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। আবার গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেওয়া শুধু নয়, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। বস্তুত গ্যাসের এ তীব্র সংকট দ্রুত নিরসন করা না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার অভিঘাত হবে সুদূরপ্রসারী। শুধু তাই নয়, গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করাও সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। আমরা মনে করি, সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থেই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জরুরিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। দেশি বিনিয়োগকারীরাও যদি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে শিল্পায়ন ঘটবে কীভাবে? অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে দেশীয় শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্যাসক্ষেত্র ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা থাকলে তাও অবিলম্বে দূর করতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও চাহিদামাফিক বাড়াতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হবে। সরকার গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।