নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন

Total Views : 22
Zoom In Zoom Out Read Later Print

দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবধি ছিল না। কয়েকজনের নাম আলোচনায় উঠে এসেছিল। পত্রপত্রিকায় তাদের ছবিসহ খবরও ছাপা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার নামও ছিল। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা, ধারণা ও অভিমতের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এমন এক ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোয়ন দিয়েছে, যার নাম কখনই কেউ বলেনি, আন্দাজও করেনি। তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি দুদকের সাবেক কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তার আরো পরিচয় আছে। তিনি আইন পেশায় সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতার পেশাতেও। তার মনোনয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন হলেও কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে মনোনীত করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত ও প্রচারিত হয়েছিল, তাদের চেয়ে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু যে সবদিক দিয়েই সেরা, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তার মনোনয়ন অবশ্যই একটা বড় চমক এবং সবচেয়ে উত্তম পছন্দ হিসেবে গণ্য। প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়ন হিসেবে এর চেয়ে ভালো অপশন আর কিছু ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে এবং আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনিই যে দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, তা নিশ্চিত। আমরা দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অভিনন্দন জানাই এবং তার পূর্ণ সাফল্য কামনা করি। তার মতে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিশ্বস্থ অনুসারী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য, বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে সৌজন্য প্রদর্শন করেছেন। তিনিও নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্থতা, ব্যক্তি হিসেবে আস্থাশীলতা, দৃঢ়তা ও আন্তরিকতা বিবেচনা করা হয়। ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাও মূল্যায়িত হয়। এই সব দৃষ্টিকোণ বলা যায়, মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বেস্ট চয়েস। ছাত্র জীবন থেকেই মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু। তিনি ছাত্রলীগের পাবনা জেলা সভাপতি এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাবনা জেলা আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রত্বকালেই বঙ্গবন্ধুর ¯েœহ লাভ করেন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শাহদৎ বরণ করলে প্রতিবাদ করে তিনি তিন বছর জেল খাটেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিচার বিভাগে যোগ দেন। ২৫ বছর চাকরি করে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরি জীবনে দু’বার জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের হত্যা, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের অনুসন্ধান গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বলা বাহুল্য, আওয়ামী লীগের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য ছাড়াও যে সব গুরু দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হয়েছে, অত্যন্ত যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেসব দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। জুডিশিয়াল সার্ভিসে তার দক্ষকতা ও কৃতিত্ব প্রশংসিত হয়েছে। দুদকে থাকা কালেও তার সুনাম অক্ষুণœ থেকেছে। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি দুর্নামমুক্ত একজন মানুষ। তাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব দিক বিচার-বিবেচনা করেছেন এবং সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এরকম ব্যক্তিরই প্রেসিডেন্ট হওয়া মানায়। তিনি শিক্ষিত, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে আসবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ বটে। তবে তার ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা। তারপরও প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সুসম্পর্ক থাকতে হয়। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রতিপালন যথাযথভাবে করার জন্য এই সুম্পর্ক অত্যন্ত আবশ্যক। দেশের রাজনীতি শান্ত-সুস্থির নয়। সামনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। রাজনীতি আরো সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে দেশে-বিদেশে উদ্বেগ, প্রশ্ন, আলোচনা-সমলোচনা জোরদার হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ তো আছেই। বৈদেশিক চাপও আছে। এমতাবস্থায়, প্রেসিডেন্টের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হতে পারে। দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়া সামাল দেয়ার জন্য এই ভূমিকার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। আইনবিদ হিসেবে যেমন, তেমনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে দক্ষ হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কার্যকর অবদান রাখতে পারেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে কমিটেড, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, ধর্মপ্রাণও বটে। তার ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পারে দেশের মানুষ। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

See More

Latest Photos