ঢালিউডে নায়িকার সংকট - এ কথা মানতে নারাজ প্রযোজক-নির্মাতারা। বরং তাদের দাবি, নায়িকা আছে পর্যাপ্ত তবে দর্শক গ্রহণযোগ্য নায়িকার অভাব রয়েছে। কেননা দিনশেষে সিনেমা দর্শকদের জন্যই। তারাই যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে সেইসব নায়িকা নিয়ে কাজ করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা একই কথা। বর্তমানে অনেক নায়িকা রয়েছেন ইমেজ ও অস্তিত্ব সংকটে। একসময় এসব নায়িকার চাহিদা থাকলেও, এখন আর কোন চাহিদা নেই। এদিকে দর্শক চাহিদা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রযোজক পরিচালকের আগ্রহ নেই তাদের নিয়ে। ব্যক্তিগত গুজব-গুঞ্জন, বি-বিচ্ছেদসহ আরও অনেক কারণে প্রতিষ্ঠিত এসব নায়িকারা নিজেদের ইমেজ হারাচ্ছেন। ফলে ভুগছেন অস্তিত্ব সংকটে। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে তাদের কারও কারও নাম শুনলেই দর্শকের মধ্যে তৈরি হচ্ছে রীতিমতো আতঙ্ক। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, গুটিকয়েক নায়িকা বর্তমানে সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। বাকিদের কোনো কাজ নেই। তাই তো আলোচনায় থাকতে ব্যক্তিগত নানাবিধ বিতর্কিত ইস্যু সামনে নিয়ে আসছেন।
যেসব ঢালিউড নায়িকা দর্শক অনীহায় অস্তিত্ব সংকটে





৯০ দশকের পর্দা কাঁপানো মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমাদের মতো নায়িকা এখন আর তৈরি হচ্ছে না। আরেকদিকে যারা কিছুটা অবস্থান তৈরি করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকরই এখন অভিনয়ে মনোযোগ নেই। ব্যক্তি জীবন নিয়েই তারা বেশি ব্যস্ত। এ কারণেই নায়িকা সংকট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, নামসর্ব্যস্ব অনেক নায়িকা রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে, কিন্তু তাদের প্রধান নায়িকা করে সিনেমা বানিয়ে লোকসানের পাল্লা আর ভারি করতে চাননা প্রযোজকরা।
এদিকে দর্শক চাহিদা না থাকায় সিনেমার বাইরেও অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন ইমেজ সংকটে থাকা এইসব নায়িকারা। এদের মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, পরীমনি, নুসরাত ফারিয়াসহ অনেকেই। তাদের অনেকের হাতেই নেই কোন সিনেমার কাজ। এছাড়াও দু’একটি সিনেমায় তাদের উপস্থিতি দেখা গেলেও, সেই সিনেমার ভাগ্যে ঘটে ভরাডুবি।
কিছুদিন আগে ঈদে মুক্তি পেয়েছিল বহুল সমালোচিত নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার একটি সিনেমা। অভিনেতা আব্দুন নূর সজলের সঙ্গে জুটি বেধে অভিনয় করেছিলেন ‘জ্বীন-৩’ সিনেমায়। মুক্তির এক সপ্তাহ পরই সিনেমাটি সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। ঈদের ব্যর্থ তিন নায়িকার তালিকায়ও রয়েছে এ নায়িকার নাম।এছাড়াও দীর্ঘদিন পর একটি সিনেমা মুক্তি পেলেও, দর্শক চাহিদা না থাকায়, সিনেমার কপালে লাগে শনির দশা। সর্বশেষ এ অভিনেত্রীকে দেখা যায়, ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ নামে একটি সিনেমায়। সেখানে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এ অভিনেত্রী। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বেশ সমালোচিত হন তিনি। এছাড়াও জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় বিদেশে বসে গণহত্যার বিরুদ্ধে ছিলেন নীরব ভূমিকায়। যা এ অভিনেত্রীকে সাধারণ মানুষের কাছে ফ্যাসিস্টের দোসর হিসাবে পরিচিত করে। এটিও তার দর্শক আগ্রহ কমার একটি কারণ হতে পারে।
এছাড়াও ফারিয়া অভিনীত আরও একটি সিনেমা রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। ‘ফুটবল একাত্তর’ নামের এ সিনেমাটিরও নাম পরিবর্তন করা হয়েছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর। নতুন নাম দেয়া হয়েছে ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’। এটিও আর মুক্তি পাবে কিনা রয়েছে সংশয়।
ঢাকাই সিনেমার একসময়ের ব্যস্ততম নায়িকা ছিলেন অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি একাধারে ৭০টিরও অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যেগুলোর অধিকাংশই ছিল ব্যবসাসফল। শাকিব খানের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে, অপু বিশ্বাস তার সেই দর্শকপ্রিয়তা আর ধরে রাখতে পারেননি।
বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা দেখা যায় না তাকে। তবে বসে নেই তিনি, নতুন পরিচয়ে ইউটিউবার হয়ে অনলাইন কনটেন্টে মনোযোগী হয়েছেন। বলা যায়, অপু বিশ্বাস এখন ইউটিউবার। সিনেমা ছেড়ে সেদিকেই এখন বেশি ব্যস্ত তিনি। এ অভিনেত্রীকে সর্বশেষ ‘ট্র্যাপ : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ নামে দুটি সিনেমায় দেখা গিয়েছিল। ২০২৪ সালে এগুলো মুক্তি পায়।
এক যুগ আগে ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয় মাহিয়া মাহির। ক্যারিয়ারে ৩০টির অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে আলোচিত একাধিক সিনেমা। এ অভিনেত্রীকে নিয়েও স্বপ্ন বুনতেন পরিচালক-প্রযোজকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই সিনেমা ছেড়ে রাজনীতির মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নৌকার টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। পরাজয় নিয়েই রাজনীতির মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
আবার সিনেমায় ফেরার চেষ্টা করছেন এ নায়িকা। কিন্তু আগের মতো আর তার তারকা ইমেজ নেই। দর্শকচাহিদা কমায় পাচ্ছেন না সিনেমার কাজ। তাকে সর্বশেষ ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিবের ‘রাজকুমার’ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঢাকাই সিনেমার বহুল সমালোচিত নায়িকা পরীমনি। আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি হয় তাকে নিয়ে। এমনকি গতকালও তার বিরুদ্ধে আদালতে হয়েছে মামলা। তাই বলা যায় অনেকটা দৌড়ের উপরেই আছেন তিনি। অভিনয়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন ব্যক্তিজীবন নিয়ে। প্রেম-বিয়ে মামলা-হামলাসহ একাধিক কর্মকান্ডে বিতর্কিত এ নায়িকা। সিনেমায় এখন তার ব্যস্ততা নেই বললেই চলে। কারণ, সিনেমায় দেখার চাইতে, দর্শক এখন তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে বেশি অভ্যস্ত। সম্প্রতি তরুণ এক গায়কের সঙ্গে প্রেমকান্ডে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। আবার নতুন করে গুঞ্জন উঠছে সেই প্রেমও নাকি ভেঙে গেছে।
এরকম নানা ইস্যুতে বিতর্কের জন্ম দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন এ নায়িকা। তাকে নিয়ে সিনেমা করাটাকেও একধরনের ‘রিস্ক’ মনে করছেন প্রযোজক পরিচালকরা। সর্বশেষ তাকে ‘মা’ নামে একটি সিনেমায় দেখা যায়। এটি ২০২৩ সালের মে মাসে মুক্তি পায়।
এছাড়া জাহারা মিতু নামে এক মেয়ে নায়িকা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগেই ঝরে গেছেন অযাচিত কর্মকান্ডের কারণে। তালিকায় আরও অনেকেই রয়েছেন। নায়িকা নিপুণও রয়েছেন অস্তিত্ব সংকটে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পরবর্তী তার সামাজিক অবস্থান এখন বলা যায় শূন্যের কোটায়।