সম্প্রতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে ভারত। রোববার (১১ মে) সন্ধ্যায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, বিমানবাহিনীর ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশন্স’ এয়ার মার্শাল একে ভারতী এবং নৌবাহিনীর ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ নেভাল অপারেশন্স’ ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ এসব তথ্য জানান। তিন বাহিনীর অফিসাররা জানান, এই সংঘাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৫ থেকে ৪০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি ইসলামাবাদের কাছে চাকলালা ঘাঁটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করাচিতেও যে কোনও মুহূর্তে আঘাত করার মতো কৌশলগত অবস্থানে ছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। তিন বাহিনীর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়, গত ৮ ও ৯ মে রাতে পাকিস্তানে বেশ কিছু ড্রোন এবং বিমান ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করে। সেগুলোর লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি। তার মধ্যে বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ড্রোন, পাইলটবিহীন বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। এছাড়া পাকিস্তানি কিছু যুদ্ধবিমানকেও গুলি করে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাল





সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনা বা সীমান্তের ওপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভারতের কোনও লড়াই নেই। ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যেসব সন্ত্রাসীকে নিধনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ভারতকে জবাব দিতে হয়েছে।
ওই হামলার পরে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে ভারতীয় সেনারাও। তবে কোনও সাধারণ নাগরিকের যাতে প্রাণহানি না-ঘটে, সে দিকটিও নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়। পাক হামলার পরে ভারতও পাকিস্তানের বেশ কিছু বিমানঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার এবং অনান্য সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত করে। আঘাত করে পাকিস্তানের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও। পাকিস্তানের যে সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আঘাত করেছে, তার মধ্যে ইসলামাবাদ সংলগ্ন এলাকাও রয়েছে।
এয়ার মার্শাল ভারতী বলেন, ‘আমরা যে ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করেছিলাম তার মধ্যে ছিল চাকলালা, রফিকি। উল্লেখ্য, চাকলালা ইসলামাবাদে অবস্থিত। ’ এছাড়া পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান, সরগোদা, জাকোকাবাদ এবং ভুলারির মতো এলাকার সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, আগ্রাসী মনোভাবকে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
এয়ার মার্শাল জানান, এই ঘাঁটিগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ভারতের। কিন্তু ভারত নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমিত জবাব দিয়েছে।
একই রকম ভাবে গত কয়েক দিন ধরে পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে কৌশলগতভাবে চাপে রেখেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ জানান, পেহেলগামকাণ্ডের পরে নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ, বিমানসহ সব বিভাগকে সংঘাতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সমুদ্রে মোতায়েন করা হয়েছিল। সন্ত্রাসী হামলার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে নৌবাহিনী আরব সাগরে কৌশলগত অবস্থান নেয়।
তিনি আরও জানান, উত্তর আরব সাগরে এমন জায়গায় বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল যেখান থেকে নিজেদের পছন্দ মতো সময়ে করাচিসহ বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা ছিল নৌবাহিনীর। ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তানি নৌসেনাদের রক্ষণমূলক অবস্থান নিতে হয়েছিল।
ভারত জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিকল্পনার মূল সামরিক লক্ষ্যই ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত অপরাধী এবং পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দেওয়া এবং তাদের ঘাঁটিগুলোকে ধ্বংস করা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই দাবি করেন, নয়টি স্থানে হামলায় শতাধিক সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ইউসূফ আজ়হার, আব্দুল মালিক রাউফ এবং মুদস্সর আহমেদ। নিহতদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত অপরাধীও রয়েছেন।
এছাড়া গত কয়েক দিনের এই সংঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তাদের জন্য শোক প্রকাশ করেন অফিসরারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নত্তোর পর্বে বিমান বাহিনীর কোনো রাফাল যুদ্ধবিমানের ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। তবে এই প্রশ্নের জবাবের এয়ার মার্শাল ভারতী সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি।
তিনি জানান, একটি সংঘর্ষের পরিস্থিতি এবং রাফালও সেটির অঙ্গ। তবে এই অভিযানে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা সেনাবাহিনীর লক্ষ্য ছিল এবং সাফল্য এসেছে। এর ফল পুরো বিশ্ব দেখতে পাবে।
তথ্যসূত্র: আনন্দাবাজার