প্রিজনভ্যানে দাঁড় করে কোর্টে আনা-নেওয়ার অভিযোগ স্ত্রীর ,অসুস্থ রিজভীকে

Total Views : 14
Zoom In Zoom Out Read Later Print

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দী রুহুল কবির রিজভীকে আজ বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে দাঁড় করিয়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে আনা ও নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী আরজুমান আর বেগম। তিনি বলেন, রুহুল কবির রিজভী একজন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি। তাকে সর্বদা লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হলেও অন্যের সাহায্য দরকার হয়। এমন একজন ব্যক্তিকে সেই কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো ঢাকার আদালতে প্রিজন ভ্যানে দাঁড় করিয়ে আনা হয়েছে এবং দুপুর পৌনে বারোটার দিকে একইভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে অমানবিক, অসাংবিধানিক ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি। রিজভীর সহধর্মিণী আরজুমান আরা বেগম আজ বৃহস্পতিবার বলেন, রুহুল কবির রিজভী কারাগারে যাওয়ার আগে অনেকটা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বেড়েছে। মুখের দিকে তাকালে চেনা যায় না। হাত ও মুখের চামড়া কেমন যেন কালচে হয়ে গেছে। এলোমোলো চেহারা। আসলে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে কি না বুঝা মুশকিল। তিনি বলেন, সকালের দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রিজভীকে কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে আনা হয়। আমি ঠিক জানিনা প্রিজনভ্যানে বসার কোনো ব্যবস্থা থাকে কি না? তবে রিজভীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম পুরো রাস্তায় তাকে দাঁড় করিয়ে আনা হয়েছে। এসময় তাকে বিষন্ন দেখাচ্ছিল। ঠিক একইভাবে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়েই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আদালতে রুহুল কবির রিজভীকে দেখার পর নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। তাকে চিনতে যে কারো কষ্ট হবে। রিজভী শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার শরীর ভালো নেই। তার অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমরা তার নিয়মিত খোঁজখবর পাই না। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি রিজভী কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
রিজভীর স্ত্রী আরও বলেন, এরআগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও রিজভীর সঙ্গে তাকে ও চিকিৎসককে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সেদিন মামলার হাজিরার জন্য রিজভীকে কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে আনা হয়েছিল। সেদিন আদালতে আনার পর তাকে রাখা হয় হাজতখানায়। পরে তার শারীরিক অসুস্থতা ও মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের অনুমতি চান। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে সাক্ষাতের অনুমতি দেন। রিজভীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকেও সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু হাজতখানার ওসি রিজভীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও ব্যক্তিগত চিকিৎসককে সাক্ষাৎ করতে দেননি। দুই ঘণ্টা কারাগারের হাজতখানায় রাখার পর সেদিন সাড়ে ১২টায় ফের রিজভীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রিজভীর প্যানেল আইনজীবী মশিউর রহমান শান্ত বলেন, হাজতি রুহুল কবির রিজভী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি গত ৮ ডিসেম্বর থেকে পল্টন থানার মামলায় কারাগারে বন্দি। তার অসুস্থতা ও মামলাজনিত কারণে স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম ও চিকিৎসকের সাক্ষাৎ প্রদান জরুরি। এ বিষয়ে আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু হাজতখানার ওসি আদালতের আদেশকে সেদিন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
রিজভীর স্ত্রী বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রুহুল কবির রিজভী পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তখন দেশে ও পরে বিদেশে তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর মাঝেমধ্যে তার পেটে সমস্যা হতো। সেই থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে রিজভী হাতের স্পর্শে খাবার খান না। খোলা পানিও খান না।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রিজভীকেও আটক করে কারাগারে নেওয়া হয়। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দলের বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও হামলা-মামলা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করতেন।

See More

Latest Photos