আমার জীবনটা সবার মত এতটা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছি অভাব-অনটনের কঠিন বাস্তবতায়। দিন এনে দিন খাওয়ার সংসার, যেখানে প্রতিটি নিশ্বাসে ছিলো সংগ্রামের ছাপ। তবুও আমার বাবা আমাদের কখনো বুঝতে দেননি সেই অভাবের ভার। ঘাম ঝরানো হালাল উপার্জনের টাকায় আমাদের ছোট ছোট শখ পূরণ করেছেন, পূরণ করেছেন পড়াশোনার সমস্ত খরচ।
সংগ্রামী নারীর মুখচ্ছবি





আমার ভাই না থাকার শূন্যতা বাবা তাঁর হাড়ভাঙা পরিশ্রম দিয়ে পূরণ করেছেন। যে বয়সে তাঁর আরাম করা উচিত ছিলো, সে বয়সে তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। বুঝে ওঠার আগেই বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলো, আর পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠলাম আমি। এখন সবাই তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, কবে আমি বাবার কষ্টের বোঝা কাঁধে তুলে নেবো।
কোচিংয়ের ফি যোগাড় করা, টিউশন, ছোটখাটো চাকরির পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা সবকিছুর চাপ একসাথে বহন করতে গিয়ে কখনো কখনো দম আটকে আসে। তবে চোখে হাজারো স্বপ্ন ভেসে ওঠে, আর বাবার ঘামে ভেজা মুখ মনে পড়লেই সমস্ত ক্লান্তি, হতাশা এক মুহূর্তে মুছে যায়। তখন মনে হয়, না আমাকে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবেই, আমাকেই স্বপ্নের মত বড় হতে হবে।
নারী জীবন বড়ই অদ্ভুত। কখনো কখনো কষ্টে, দুঃখে, হতাশায় ভেঙে পড়লেও আবার নতুন করে উঠে দাঁড়াতে হয়। কারণ পরিবারের হাসি, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ সবকিছুর সাথে নারীর জীবন বাঁধা থাকে। নিজের কষ্টের কথা বুকের ভেতর চেপে রেখে পরিবারকে হাসি উপহার দেওয়াই যেন নারীর নিয়তি। পরিবারের স্বপ্নগুলো পূরণের মাধ্যমেই নারী খুঁজে নেয় নিজের আনন্দ, নিজের সুখ।
আসলে একজন নারীই জানে তার মনের গভীরে লুকানো যন্ত্রণার গল্প। বাইরে থেকে সে হয়তো শক্ত, অটল, দৃঢ় কিন্তু অন্তরের ভেতরে জমে থাকে হাজারো অশ্রু, অপূর্ণতা আর অদম্য সংগ্রামের ইতিহাস। তবুও নারীরা হার মানে না, বারবার ভেঙে গিয়েও আবার গড়ে ওঠে। কেননা, নারী মানেই ধৈর্য, ত্যাগ আর অশেষ ভালোবাসার প্রতিমূর্তি।