জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবার প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ

Total Views : 31
Zoom In Zoom Out Read Later Print

দেশীয় জাত রক্ষায় জোর প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

দেশীয় জাতের গরু, ছাগল, হাঁস–মুরগি এবং আধুনিক প্রযুক্তি—দুটি দিকেই সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবার প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের উদ্বোধন হলো আজ বুধবার। আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তা দেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের।

তিনি বলেন, দেশের নানা অঞ্চলে গবাদিপশু ও পোল্ট্রির যে বৈচিত্র্য আছে, তা শুধু উৎপাদন ব্যবস্থার অংশ নয়—গ্রামীণ জীবিকা, নারীর আয়, পুষ্টি এবং জলবায়ু–সহনশীলতার সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। স্থানীয় জাতের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, কম উৎপাদন খরচ এবং পরিবর্তিত জলবায়ুতে টিকে থাকার সক্ষমতাকে তিনি দেশের বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।

ফরিদা আখতার জানান, দেশীয় জাত সংরক্ষণে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কেন্দ্রে গবেষণা চলছে। একই সঙ্গে উৎপাদন বাড়াতে উন্নত জাতের ষাঁড় এনে কৃত্রিম প্রজননে শংকর জাত তৈরি করা হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্প গত এক দশকে দ্রুত বেড়েছে—দেশে নিবন্ধিত ৮৫ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক খামার এবং প্রান্তিক পর্যায়ে আরেক দুই লাখের মতো খামার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন উৎপাদিত হয় প্রায় ৬ কোটি ৬৮ লাখ ডিম। দুধ উৎপাদনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে গুঁড়া দুধ; অন্যদিকে চিলিং সেন্টার স্বল্পতা ও সংগঠিত বিপণনব্যবস্থা না থাকায় অনেক প্রান্তিক নারী উৎপাদক খুব কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। সিরাজগঞ্জে মিল্ক ভিটার সমবায় মডেল অনুসরণ করে অন্য জেলাতেও দুধ সংগ্রহের ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন উপদেষ্টা।

মহিষ পালনকেও তিনি দেশের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তুলে ধরেন। উপকূল, চরাঞ্চল, নদীভাটি ও হাওড়–বাঁওড়ে প্রায় ১৫ লাখ মহিষ রয়েছে; এর মধ্যে ৫৪ শতাংশই উপকূলীয় এলাকায়। ভোলার মহিষের দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। নতুন চর ও সরকারি খাস জমিকে চারণভূমি হিসেবে সমবায়ভিত্তিক বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তাও তিনি তুলে ধরেন।

বক্তৃতায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিআই স্বীকৃতি, বছরে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বর্গফুট চামড়া উৎপাদন, রপ্তানি সম্ভাবনা, আর গবাদিপশুর রোগ নিয়ন্ত্রণে ১৭ রকম টিকার ৩৪ কোটি ডোজ উৎপাদনের বিষয়ও তিনি উল্লেখ করেন। লাম্পি স্কিন রোগ দমনে চলমান টিকাদান, চার জেলায় এফএমডি–মুক্ত অঞ্চল গড়ার কার্যক্রম এবং ছাগলের পিপিআর রোগ নির্মূলে সাম্প্রতিক টিকাদানও তাঁর বক্তব্যে আসে।

ফরিদা আখতার বলেন, গবাদিপশু শুধু খাবার নয়—লক্ষ পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অংশ। বিশেষ করে নারীরা পরিবারের আয় ও সঞ্চয়ের বড় উৎস হিসেবে গরু–ছাগল ও হাঁস–মুরগি পালন করেন। শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে দুধ সরবরাহও বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, রমজানে স্বল্পমূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রি কর্মসূচির কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এ বছর সারা দেশে ৪৯৫টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৯ লাখ ৭০ হাজার ক্রেতাকে প্রাণিজ খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ খাতে অবদান রাখা ১৫ জনকে পাঁচ ক্যাটেগরিতে ব্রোঞ্জ, রৌপ্য ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। 

ফরিদা আখতার বলেন, খাতটিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ মিলেই দেশের আমিষ–নিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে। তিনি দেশীয় জাত সংরক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে উৎপাদন বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর জোর দেন।

এদিকে সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের পুরোনো বাণিজ্যমেলার মাঠে তিন দিনব্যাপী দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা বিনা খরচায় দেখতে পারবেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, ঘোড়া, খরগোশ, কবুতর, কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে নানা পাখি–পশুপাখি।

সঙ্গে আছে দুধ–মাংসজাত খাবারের স্টল, ঐতিহ্যবাহী রেসিপি, প্রাণিপালনের আধুনিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

সারাদেশের খামারিরা অংশ নিচ্ছেন এবারের আয়োজনে। লক্ষ্য—মানুষকে এই খাতের সম্ভাবনা বোঝানো এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান জানান, এবারের সপ্তাহ দেশজুড়ে একইসঙ্গে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদযাপিত হচ্ছে। দেশের উন্নত জাতের প্রাণিসম্পদ একসঙ্গে দেখার এমন আয়োজন আগে হয়নি।


See More

Latest Photos