ফাইনালের মতোই ফাইনাল। নারী সাফের ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পরই বাংলাদেশ ও নেপালের খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের মধ্যে শুরু হয় কথার যুদ্ধ। ফাইনালে হলোও তাই। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলার প্রথম মিনিট থেকেই জমে ওঠে ম্যাচ। ঘাম ঝরানো লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
বাংলাদেশ আবার সাফ চ্যাম্পিয়ন
নেপালকে হারিয়ে প্রতিযোগিতার সপ্তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সর্বশেষ আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এ নিয়ে পরপর দুটি শিরোপা জিতে রঙ্গশালা রাঙালেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
বুধবার নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে নেপালকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। খেলার দ্বিতীয়ার্ধেই হয়েছে তিনটি গোল। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার এনে দেওয়া লিডের পর নেপালকে সমতায় ফেরান আমিশা কারকি। এরপর জয়সূচক গোল আসে ঋতুপর্ণা চাকমার পা থেকে। সর্বশেষ সাফের ফাইনালেও উঠেছিল এ দুই দল। সেবার নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এবারও অপরাজিত পিটার জেমস বাটলারের শিষ্যরা। সব মিলিয়ে সাফে টানা ৯ ম্যাচে অপরাজিত লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এদিন প্রথম মিনিটেই নেপালের গোলে শট তহুরার। তবে বল বেরিয়ে যায় ডান পাশঘেঁষে। তবে নেপালের গোলরক্ষকের ভুল গোলকিকে ডি-বক্সের সামনেই বল পেয়ে যান তহুরা। জোরালো শটে বারে লেগে ফিরে আসে বল। ফিরতি বল পেয়ে হেড দিয়ে সহজেই সেটি ধরে ফেলেন নেপালের গোলরক্ষক।
পরের মিনিটে একই ভুল করতে বসেছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। পরক্ষণেই অবশ্য বল ক্লিয়ার করেন তিনি। পঞ্চম মিনিটে নিজেদের ভুলে নিজেদের অর্ধ থেকে থ্রু পাস দিয়ে বল বের করেন নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি। বিপদ বাড়তে দেননি রূপনা। পরের মিনিটে লেফট উেইং দিয়ে আক্রমণে ওঠেন সাম্বা। ডি-বক্সের বামপ্রান্ত থেকে আড়াআড়ি ক্রস দিলে অবশ্য কোনো সতীর্থ খুঁজে পাননি তিনি। বল ক্লিয়ার করেন মানসুরা পারভীন। নবম মিনিটে মারিয়া মান্ডার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ঋতুপর্ণা চাকমা। নেপালি জটলার মধ্য থেকে অবশ্য গোল আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতি আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণ কাপায় নেপাল। আতঙ্ক ছড়ান সাবিত্রা। তাকে আটকাতে রূপনা উঠে আসেন ওপরে। বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে না পারলে বল পেয়ে যান নেপালি ফরোয়ার্ড আমিশা কারকি। ফাঁকা গোলে শট নিলে এবার বারপোস্টে লাগায় গোলবঞ্চিত হয় নেপাল।
খেলার ২০ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখে নেপাল। মনিকাকে বাজেভাবে ফাউল করেন ম্যাচে প্রথম কার্ড দেখেন আম্রিতা। ২৫ মিনিটে বাংলাদেশের ডি-বক্সে ফের আতঙ্ক ছড়ায় নেপাল। সরাসরি ডি-বক্সে নেওয়া লং থ্রো লাফিয়ে ধরতে চেষ্টা করেন রূপনা। বল পুরোপুরি গ্রিপ করতে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে পরে যান বাংলাদেশি গোলরক্ষক। ডিফেন্ডারদের জটলার মধ্য থেকে ফাঁকা গোলের ফায়দা অবশ্য নিতে পারেনি নেপালি মেয়েরা। ২৮ মিনিটে সাবিত্রার দুর্দান্ত পাস থেকে প্রায় ফাঁকা জায়গা থেকে গোল গোলতে ব্যর্থ হন আমিশা। ২০ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে ফাউল করায় বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রিকিক পায় বাংলাদেশ। ডি-বক্সের বাম কোনা থেকে নেওয়া শট যায় ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে দিয়ে। পরের মিনিটে ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়ে ডি-বক্সের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন মনিকা। বিরতির পরও আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। ডেডলক ভাঙে ম্যাচের ৫২ মিনিটে। আক্রমণের সুর বেঁধে দেন সাবিনা, তহুরার পা ঘুরে বল যায় মনিকার কাছে। জটলার মধ্য থেকে আলতো টোকায় প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান এ ডিফেন্ডার। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।
তিন মিনিট পরই নেপালকে ১-১ সমতায় ফেরান আমিশা। প্রীতির থ্রো পাস বাংলাদেশের ডিফেন্স ভেদ করে বেরিয়ে গেলে রূপনাকে পরাস্ত করে বাংলাদেশের জাল কাপান আমিশা। ম্যাচে একাধিকবারই এ ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপান। সাবিত্রাকে নিয়ে অতি সাবধানী বাংলাদেশের রক্ষণের সুযোগ নেন আমিশা। শেষ পর্যন্ত এ ফরোয়ার্ডই নেপালকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত গোল। ৬১ মিনিটে সাবিত্রার ভুলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। লং পাস পেয়ে অভিজ্ঞ এ ফরোয়ার্ড একাই এগিয়ে যান বল নিয়ে। তার গতির কাছে পরাস্ত হয় বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। আগুন্তক গোলরক্ষক রূপনাও হন পরাস্ত; তবে সাবিত্রা কোনাকুনি শট যায় গোলের ডান পাশঘেঁষে। ৬৬ মিনিটে নেপালি মিডফিল্ডার প্রীতির বাড়ানো বলে রূপনা বরাবর শট নেন সাবিতা রানা। ৬৮ মিনিটে মারিয়ার দূরপাল্লার শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফিস্ট করেন নেপালের গোলরক্ষক আঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা। ম্যাচে পাওয়া চতুর্থ কর্নার থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭১ মিনিটে সাবিত্রার দূরপাল্লার আড়াআড়ি শট যায় ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে দিয়ে।
৭৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। কয়েকজনকে কাটিয়ে বাম কর্নারের কাছ থেকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে আড়াআড়ি ক্রস দেন ঋতু। কিন্তু গোলমুখ থেকে হেড নিতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। তবে ২ মিনিট পরই দলকে এগিয়ে দেন ঋতু। কর্নারের কাছে বাম প্রান্ত থেকে এ ফরোয়ার্ড আড়াআড়ি শট নেন গোলে। বাতাসে ভেসে ওই শটেই বল যায় নেপালে গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে সরাসরি জালে। এবারের প্রতিযোগিতায় এটি ঋতুর দ্বিতীয় গোল। নির্ধারিত সময়ের ৮ মিনিট বাকি থাকতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে। ওই গোলের পরই অধিনায়ক সাবিনাকে তুলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার স্বপ্না রানীকে বদলি হিসেবে নামান কোচ জেমস পিটার বাটলার। খেলার বাকি সময়ে চেষ্টা করেও আর ম্যাচ ফিরতে পারেনি নেপাল। এ সময় বেশ কয়েকটি হাফচান্স তৈরি করে বাংলাদেশ। তবে রক্ষণে বেশি মনোযোগী বাংলাদেশও পায়নি গোলের দেখা। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের লিড ধরে রেখেই ফাইনাল নিশ্চত করেন বাংলাদেশর মেয়েরা।