খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর কথিত মারমা ছাত্রী ধষির্ত হওয়ার অভিযোগ তুৃলে কয়েকটি পাগাড়ি সংগঠন তুলকালাম কান্ড ঘটায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে লোকজনকে রাস্তায় নামিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ পাহাড়ে বিক্ষোভ-অবরোধ ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহারসহ নানা রকম দাবিদাওয়া উপস্থাপন করে।
দেশি-বিদেশি অপচেষ্টা কঠোর হস্তে প্রতিহত করতে হবে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির





সেই সাথে তারা পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের উপর আক্রমণাত্মক তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত শুরুর আগেই অভিযুক্ত সন্দেহজনক একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তারপরও পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলো স্থানীয় বাঙালি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসব সংঘর্ষে এরই মধ্যে ৭জনের মৃত্যু, সেনাসদস্যষহ বেশকিছু মানুষ আহত এবং অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসি গ্রুপগুলোর ইন্ধনে বিভিন্ন অবাস্তব দাবি-দাওয়া নিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ডেকে কার্যত পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে অবরুদ্ধ করে সেখানকার সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালীদের জিম্মিদশায় নিপতিত করার অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। সেনাবাহিনীর সাহসী পদক্ষেপে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও বেশকিছু মানুষ হতাহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কে নেবে? পূজার ছুটিতে পাহাড়ে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছিল। হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সাজেক, খাগড়াছড়ির পর্যটকদের বিশেষ ব্যবস্থায় সরিয়ে আনা হলেও পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত স্থানীয় উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষ বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রথম কথিত মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ উঠার পর কথিত পাহাড়ি ছাত্রজনতার ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ, পরদিন থেকে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি বাঙালিদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে পুরো পার্বত্যাঞ্চলে চরম নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। থানায় অভিযোগ গ্রহণ, আসামি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার পরও পাহাড়কে উত্তপ্ত করে তোলার অপপ্রয়াসের সাথে ইউপিডিএফ ও জেএসএস’র মত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিতৎপরতার সাথে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পতিত ফ্যাসিস্ট ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ অনেকটাই স্পষ্ট। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও এ বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন।হেফাজতে ইসলামসহ দেশের আলেম সমাজও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কথিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির নামে পাহাড় থেকে শত শত সেনা ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার পর সেখানকার সশস্ত্র গ্রুপগুলো শান্তিচুক্তির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পর পাহাড় নিয়ে প্রতিবেশি দেশের ষড়যন্ত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। বিশেষত ভারতের বশংবদ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রিজিমের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পাহাড়ে নতুন ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার ডালপালা বিস্তার করেছে। কথিত মারমা কিশোরী ধর্ষিত হওয়া মিথ্যা অভিযোগকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার অপচেষ্টা এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিশোরী ধর্ষণ মামলার তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল কমিটির সদস্য ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক জয়া চাকমা, মেডিকেল অফিসার মীর মোশারফ হোসেন ও নাহিদা আকতার। সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেয়া রিপোর্টে মারমা কিশোরীর ধর্ষণ বা শারিরীক-মানসিক নির্যাতনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এহেন বাস্তবতায় হুজুগে গুজব ছড়িয়ে পাহাড়ে অশান্তি ও সংঘাত সৃষ্টির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ক্রমে জোরালো হয়ে উঠছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি বরাবরই নাজুক। বিগত আওয়ামী রিজিমের সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরের লোক মনে করে খুন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির একচেটিয়া সোল এজেন্ট বনে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের পুলিশ বাহিনীতে বিশঙ্খলা এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের পলায়নের মধ্য দিয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অব কমান্ডে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, তা এখনো পুরণ হয়নি। অন্যদিকে দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকার কারণে যে যেভাবে পারছে চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাইরের কোনো জনপদ নয়। বাঙ্গালি ও পাহাড়ি উভয়েই এসব অপরাধে জড়িত। অপরাধের বিচার এবং প্রতিবিধান সামাজিক ও আইনগতভাবেই নিরসনের প্রয়াস অব্যাহত থাকতে হবে। সেখানে একজন কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে পাহাড়ে সহিংস সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে যে বা যারাই জড়িত থাক, তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে কথিত সাইকেল চুরি কিংবা ত্রিপুরা মেয়ের ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করেও পাহাড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার অপতৎপরতা দেখা গেছে। সীমান্তের ওপার থেকে বিপজ্জনক ন্যারেটিভ তৈরী করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে আশ্রয়,প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে। সেনা অভিযানে শসস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের আস্তানা থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ রাশিয়া ও ভারতের নির্মিত সামরিক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র কোনো নতুন বিষয় নয়। পাহাড়িরা যদি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সমমর্যাদা ও আইনগত নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করার বদলে ভারতীয় ষড়যন্ত্রে ভিন্ন কিছু হাসিল করতে চায়, তাহলে সরকার ও সেনাবাহিনীকে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। দেশের অখন্ডতাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে, এমন কোনো বৈষম্যমূলক শান্তিচুক্তি দেশের জনগণ সমর্থন করেনা। পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসন ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। একদিকে ভারতীয় মদতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ-বিভক্তি সৃষ্টির প্রয়াস দেখা যাচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়ের বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপ জেএসএস এবং ইউপিডিএফ’র মধ্যকার বিরোধ নিরসন করে একীভূত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক দল এবং অর্ন্তবর্তী সরকার এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা পুনরায় হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়ে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করে সকলের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপপ্রচার, গুজব ও সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতিতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুয়া অভিযোগে সস্ত্রাসী তৎপরতা ও হতাহতের ঘটনার জন্য দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্যাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।