বড় পর্দায় ন্যায় ও সংঘাতের গল্প: ইয়ামি-ইমরানের 'হক'

Total Views : 11
Zoom In Zoom Out Read Later Print

শাহ বানু মামলার অনুপ্রেরণায় নির্মিত সামাজিক ড্রামা মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল

'রাজি' বা 'বধাই দো'-এর মতো দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দেওয়া প্রযোজনা সংস্থা জংলি পিকচার্স এবার নিয়ে আসছে এক গভীর সামাজিক বার্তা বহনকারী সিনেমা— 'হক'। এটি একটি আদালত-কেন্দ্রিক ড্রামা, যেখানে ন্যায়বিচারের অনুসন্ধান, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রশ্ন, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং নারীর মর্যাদার সংগ্রাম একসঙ্গে উঠে এসেছে। ভারতের বহুল আলোচিত শাহ বানু মামলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ভারতীয় সমাজ ও আইন ব্যবস্থার গভীরে প্রবেশ করে এক মানবিক সংলাপ তৈরি করবে।

১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সেই ঐতিহাসিক রায়, যা ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার মধ্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, সেই প্রেক্ষাপটেই 'হক'-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। এটি দর্শকদের ভাবতে বাধ্য করবে: ধর্মীয় ব্যাখ্যা কি আইনের ঊর্ধ্বে স্থান পেতে পারে? নাকি একজন নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারই সর্বোচ্চ?

নতুন অবতারে ইয়ামি ও ইমরান

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় নির্মাতা সুপারন এস. বর্মা পরিচালিত এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিয়া বানু-র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইয়ামি গৌতম। সাজিয়া একজন মুসলিম নারী, যিনি প্রথা ও পিতৃতান্ত্রিক বেড়াজাল ভেঙে নিজের এবং সন্তানের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন।

অন্যদিকে, সাজিয়ার স্বামী আইনজীবী আব্বাস-এর চরিত্রে দেখা যাবে ইমরান হাশমি-কে। রোমান্টিক ঘরানার পরিচিত এই অভিনেতা এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চরিত্রে। আদালতের ভাষণে তার যুক্তি ও দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি দর্শকদের মননে ছাপ ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইয়ামি ও ইমরানকে এই প্রথমবার বড় পর্দায় একসঙ্গে দেখা যাবে। তাদের রসায়ন, বিতর্কের মুখোমুখি দৃশ্য এবং আদালত কক্ষের টানটান মুহূর্তগুলো 'হক'কে এক আবেগঘন ও মননশীল অভিজ্ঞতায় পরিণত করেছে।

ট্রেলার এবং সংলাপে মূল বার্তা

ছবির ট্রেলারে দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের পর সাজিয়া যখন আদালতের শরণাপন্ন হন, তখন ব্যক্তিগত ক্ষোভ, সামাজিক চাপ ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা মিলেমিশে এক জটিল সংঘাত সৃষ্টি করে। ট্রেলারের একটি শক্তিশালী সংলাপ হলো: "যখন একজন নারী তাঁর অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেন, তখন তাঁর কণ্ঠ একা থাকে না, তা সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিধ্বনিত হয়।"

ইয়ামি গৌতম সাজিয়া চরিত্রটি নিয়ে বলেছেন, "এটি শুধু এক নারীর লড়াই নয়, এটি প্রতিটি নিস্তব্ধ কণ্ঠের প্রতীক।" ইমরান হাশমির মতে, 'হক'-এর আদালতের দৃশ্যগুলো কেবল যুক্তি ও প্রমাণের লড়াই নয়, এটি 'ভালোবাসা, পরিচয়, বিশ্বাস ও সমাজের ভেতরের দ্বন্দ্বের প্রতিফলন'।
বিতর্ক ও প্রধান প্রশ্ন

যদিও ছবিটি নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি বিতর্কমুক্ত নয়। সম্প্রতি শাহ বানুর পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে ছবি মুক্তির স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, যেখানে তাদের দাবি, ছবিটি মুসলিম সমাজের ভাবাবেগে আঘাত হানতে পারে।

তবে ছবিটির মূল প্রশ্নটি দর্শকদের সামনে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে: 'কওম' না 'আইন?' — অর্থাৎ ধর্মীয় প্রথা, সামাজিক অবস্থান নাকি সংবিধান? কার কর্তৃত্বে বিচার হবে? এই প্রশ্নই 'হক' সিনেমার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

'হক' কেবল বিনোদন নয়, এটি চিন্তা, বিতর্ক ও আত্মসমালোচনার সুযোগও এনে দেবে। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে এই চলচ্চিত্র। এখন দেখার বিষয়, ন্যায় ও আত্মসম্মানের এই গল্প দর্শক-সমালোচকদের হৃদয়ে কতটা সাড়া জাগাতে পারে।

See More

Latest Photos